Auto Ads 1

কোমর ব্যথার কারন ও সহজ ঘরোয়া চিকিৎসা

কোমরের ব্যথায় কিছু ঘরোয়া উপায় বা টোটকাগুলি যেগুলো ব্যবহার করলে, ম্যাজিকের মতো ব্যথা থেকে উপশম পাবেন ।

ব্যথা একটি পীড়াদায়ক অনুভূতি প্রায়ই তীব্র বা ক্ষতিকর উদ্দীপনার । এটি একটি জটিল বিষয় হবার কারণে ব্যথার সংজ্ঞা বর্ণনা করা কঠিন। দ্য ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর স্টাডি অব পেইন'-এর ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত সংজ্ঞাঃ "ব্যথা একটি অপ্রীতিকর অনুভূতি এবং মানসিক অভিজ্ঞতা । চিকিৎসাবিজ্ঞানে রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ব্যথা একটি রোগের উপসর্গ হিসাবে ধরা হয়।

দেহের বিভিন্ন অঙ্গকে রক্ষা করার জন্য ব্যথা সেসব অঙ্গকে ব্যথার উৎস থেকে দুরে সরিয়ে নিয়ে যাবার কাজ করে। উৎস থেকে সরে যাবার পরে সাধারণত বেশিরভাগ ব্যথা ধীরে ধীরে কমে যায়, কিন্তু এটা দীর্ঘদিনও থাকতে পারে। কখনো কখনো বাইরের কোন উপসর্গ ছাড়াই ব্যথা হতে পারে।

ব্যথা সাধারণত ক্ষণস্থায়ী, যে রোগের কারনে ব্যথা অনুভূত হয় সেই রোগ উপশম হলে ধীরে ধীরে ব্যথা সেরে যায়, কিন্তু কিছু কিছু অবস্থায়, যেমন রিউম্যাটয়েড, পেরিফেরাল স্নায়ুরোগ, ক্যান্সার এবং ইডিওপ্যাথিক কারণে দীর্ঘদিনের ব্যথা হতে পারে। তিন মাসের কম সময়ের ব্যথা কে সাধারণত তীব্র ব্যথা এবং ৬ মাসের বেশি সময়ের ব্যথাকে ক্রনিক ব্যথা বলা হয়। অন্যদের মতে তীব্র ব্যথা স্থায়ী হয় ৩০ দিনের কম আর ক্রনিক ব্যথা ছয় মাস' সময়কালে ।


ব্যথার বিবর্তনীয় এবং আচরণগত ভূমিকাঃ

ব্যথা শরীরের একটা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিকর পরিস্থিতি বা অবস্থা এড়াতে পারে। এটা সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যাদের জন্মগতভাবে ব্যথার অনুভূতি কম, তাদের আয়ুষ্কালও কম দেখা গিয়েছে।

জীববিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স তার বই, The Greatest Show on Earth: The Evidence for Evolution, -এ কেন ব্যথা গুরুত্বপূর্ণ সেটা বলতে গিয়ে ব্যথা না থাকাকে একটা "লাল পতাকা" অর্থাৎ সতর্ক সংকেতের সাথে তুলনা করেছেন। চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নেবার কারণগুলোর মধ্যে সবথেকে বড় কারণ হল ব্যথা অনুভূত হওয়া ।

এতো গেলো সর্বঅঙ্গের ব্যথা ,আসুন এবার জানি কোমর ব্যথার কারন ও প্রতিকার সম্পর্কে ।

কোমরে ব্যথা কেন হয়ঃ

লাম্বার স্পনডোলাইসিস

মানব দেহের কোমরের পাঁচটি হাড় আছে। বয়সের কারণে বা বংশগত কারণে কোমরের হাড়গুলো যদি ক্ষয় হয়ে যায়, এবং যে ব্যথা অনুভূত হয় তাকে লাম্বার স্পনডোলাইসিস বলে।

এলআইডি

ব্যথার কারন হিসেবে এটিও শক্তিশালী একটি কারণ। এলআইডি সাধারণত ২৫ থেকে ৪০ বছরের মানুষের ক্ষেত্রে বেশি হয়। মানুষের হাড়ের মধ্যে ফাঁকা জায়গা থাকে। এটি পূরণ থাকে তালের শাঁসের মতো ডিস্ক বা চাকতি দিয়ে। এই ডিস্ক যদি কোনো কারণে বের হয়ে যায়, তখন স্নায়ুমূলের ওপরে চাপ সৃষ্টি করে। এর ফলে কোমরে ব্যথা হতে পারে।

নন-স্পেসিফিক লো বেক পেন

কোনো কারণে মাংসপেশি, হাড়, স্নায়ু – এই তিনটি উপাদানের সামঞ্জস্য নষ্ট হলে ব্যথা হয়। এই সমস্যাটি সাধারনত যুবকদের মধ্যে বেশি দেখা দেই । এই ব্যথা পুরোপুরি সারানোর চিকিৎসা এখনো আবিষ্কার হয়নি। এই ব্যথা নিরাময়ের জন্য বিশ্বব্যাপী গবেষণা চলছে।

এছাড়াও বিভিন্ন কারণে কোমরে ব্যথা হতে পারে।

  • কোনো কারনে কোমরে আঘাত পেলেও ব্যথা হয় ।
  • মাংসপেশি শক্ত হয়ে গেলে বা মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়লে কোমরে ব্যথা হয়।
  • শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণেও কোমরে ব্যথা অনুভুত হয়।
  • ইনফেকশন ও শিরদাঁড়ায় টিউমার হলে কোমর ব্যথা হয়ে থাকে ।
  • একটানা হাঁটলে বা বেশিক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলেও কোমরে ব্যথা হতে পারে ।
  • মাজায় বা কোলে কিছু বহন করলেও কোমরে ব্যথা হতে পারে।

রাত থেকে দিন - দিন থেকে রাত - ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকার কারনে ব্যথার সৃষ্টি হতে পারে ।

যাদের বয়স চল্লিশের কাছাকাছি বা তার বেশি এমন বয়সীদের ব্যথা অনুভুত বেশি দেখা দেয় । ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা বশি কোমরের ব্যথায় আক্রান্ত হন।

কোমর ব্যথার লক্ষণঃ

  • অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকলে এ ব্যথা কিছুটা কমে আসে। কোমরে সামান্য নড়াচড়া হলেই এ ব্যথা বেড়ে যায়।
  • কোমর ব্যথার সঙ্গে পায়ে ব্যথা নামতে বা উঠতে পারে, হাঁটতে গেলে পা খিঁচে আসে বা আটকে যেতে পারে, ব্যথা দুই পায়ে বা যে কোনো এক পায়ে নামতে পারে। কোমরের মাংসপেশি কামড়ানো ও শক্ত ভাব হয়ে যায়।
  • প্রাত্যহিক কাজে, তোলা পানিতে গোসল করা, হাঁটাহাঁটি করা ইত্যাদিতে কোমরের ব্যথা বেড়ে যায়।

ব্যথার সময় আর যা হয়

  • প্রথমেদিকে কোমরে অল্প ব্যথা থাকলেও ধীরে ধীরে ব্যথা বাড়তে থাকে। অনেক সময় হয়তো রোগী হাঁটতেই পারে না।
  • ব্যথা কখনও কখনও কোমর থেকে পায়ে ছড়িয়ে পড়ে। পায়ে ঝিনঝিন ধরে যায় ।
  • সকালে ঘুম থেকে উঠে পা ফেলতে সমস্যা হতে পারে বা পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা হয়।
  • পা অবশ ও ভারী হয়ে যায়। পায়ের শক্তি কিছুটা কমে যায়।
  • মাংসপেশি মাঝে মধ্যে সংকুচিত হয়ে যায়।

মাজা ব্যথার রোগ নির্ণয়

ব্যথার ক্ষেত্রে কোমরের কিছু পরীক্ষা করতে হয় -
  • ফরোয়ার্ড বন্ডিং পরীক্ষা, ব্যাকওয়ার্ড বন্ডিং পরীক্ষা।
  • নিউরোলজিক্যাল ডিফিসিয়েন্সি আছে কী না, তা নির্ণয় করা হয়।
  • কোমরের এক্স-রে এবং এমআরআই করতে হবে।
  • রক্তের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করা হয়।
  • ক্যালসিয়ামের পরীক্ষা, ইউরিক এসিডের পরিমাণ, শরীরে বাত আছে কি না এসব পরীক্ষা করতে হয়।
  • ক্রনিক ব্যাক পেনের ক্ষেত্রে এইচএলএবি-২৭ পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।

প্রাথমিক ক্ষেত্রে করণীয়

  • ঝুঁকে বা মেরুদণ্ড বাঁকা করে কোনো কাজ করা উচিৎ নয় ।
  • ঘাড়ে ভারী কিছু তোলা থেকে বিরত থাকুন। নিতান্তই যদি দরকার হয় , তাহলে ভারী জিনিসটি শরীরের কাছাকাছি এনে কোমরে চাপ না দিয়ে ঘাড়ে তোলার চেষ্টা করুন।
  • নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করুন। শারীরিক শ্রমের সুযোগ না থাকলে ব্যায়াম অথবা হাঁটাহাটি করতে হবে ।
  • মোটা ব্যক্তির শরীরের ওজন কমাতে হবে। সবার ক্ষেত্রেই ওজন নিয়ন্ত্রণ করা উচিৎ ।
  • একই জায়গায় বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে অথবা বসে থাকা যাবে না।
  • ঘুমানোর সময় সোজা হয়ে ঘুমাতে হবে। বেশি নড়াচড়া করা যাবে না। ঘুম থেকে ওঠার সময় যে কোনো একদিকে কাত হয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে।

আসুন জেনে নিই , অফিসে বসে বসে সারাদিন কাজ করার পরেও কিভাবে নিজেকে ব্যথা থেকে দূরে রাখবেন?

  • ডেস্কে বা এক জায়গায় বেশিক্ষণ বসে থাকা মোটেও উচিৎ নয় ।
  • ডেস্ক ছেড়ে বা বসার জাইগা ছেড়ে মাঝে মাঝে উঠে পড়ুন। কোমর ভাঁজ করে মাঝে মাঝে শরীর চর্চা করুন ।
  • হালকা ব্যথা হলে অবহেলা না করে ওষুধ এবং পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে। 
  • হালকা গরম ভাপ দিন - কোমরের যে জায়গায় ব্যথা সেখানে গরম ভাপ দিলে যন্ত্রণা থেকে অনেকটা ভালো অনুভুত হয় ।
  • কোমর ব্যথার বিভিন্ন মলম ব্যবহার করতে পারেন। তবে মালিশ করা যাবে না।

মাজা ব্যথা সারানোর ঘরোয়া টোটকা বা সহজ উপায় । 

আসুন জেনে নেয়া জাক , কোমরের ব্যথায় কিছু ঘরোয়া উপায় বা টোটকাগুলি যেগুলো ব্যবহার করলে, ম্যাজিকের মতো ব্যথা থেকে উপশম পাবেন ।


মাজার ব্যথা উপশমে আদাঃ

  • আদাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম । মানব দেহে পটাশিয়ামের অভাবের ফলে নার্ভের সমস্যা দেখা দেয়। প্রতিদিন নিয়ম করে আদা খেলে কোমরের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ।

ব্যথা উপশমে হলুদঃ

  • দুধের সঙ্গে নিয়ম করে হলুদ খেলে কোমরের ব্যথা অনেকাংশেই কমে যায় ।

ব্যথা উপশমে মেথি বীজঃ

  • অল্প একটু দুধের সঙ্গে মেথি বীজের গুড়ো মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। এবং এই মিশ্রন ব্যথার জায়গায় লাগান ,দেখুন অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যথা কিছুটা কমে যাবে ।

ব্যথা সারাতে লেবুর শরবতঃ

  • লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি । আর এই ভিটামিন সি যন্ত্রণা উপশমে খুবই কার্যকারী। নিয়মিত লেবুর সরবত খেলে ব্যাথা কমে যায় ।

ব্যথা উপশমে অ্যালোভেরাঃ

  • নিয়মিত অ্যালোভেরা শরবত খেলে কোমরের ব্যথা কমে যায় ।

ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম জাতীয় খাদ্যঃ

  • দুধ, ঘি, চিজ, ফল, শাকসবজি, বাদাম ইত্যাদি প্রতিদিন নিয়ম করে খেলে কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ।

মাজা ব্যথা বা কোমর ব্যথার চিকিৎসাঃ

  • ব্যথা তিন দিনের বেশি স্থায়ী হলে অবশ্যই একজন ফিজিওথেরাপিস্ট কিংবা নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে। ব্যথা তীব্র হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তি থেকে ফিজিওথেরাপি নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে তিন-চার সপ্তাহ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রাখা হতে পারে।
  • কম ব্যথা হলে আউটডোর ফিজিওথেরাপি দেয়া হয়ে থাকে। অনেকেই কোমর ব্যথা হলে বিভিন্ন ব্যথা নাশক ওষুধ খেয়ে ফেলে। এটা একেবারে ঠিক নয়। বিভিন্ন কারণে কোমরে ব্যথা হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করা প্রয়োজন।
  • ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনও এমন ওষুধ তৈরি হয়নি যে ওষুধ খেলে আপনার মাংসপেশি লম্বা হবে, শক্তিশালী হবে এবং আপনার জয়েন্ট মবিলিটি বেড়ে যাবে।
  • থেরাপি বা এক্সারসাইজ-ইজ এ মেডিসিন যা আপনাকে ওই কষ্টগুলো থেকে মুক্তি দেবে। সুতরাং সম্পূর্ণ চিকিৎসা পেতে হলে আপনাকে সঠিক মোবিলাইজেশন, মেনুপুলেশন, স্ট্রেচিং এবং স্ট্রেন্দেনিংয়ের মতো চিকিৎসা করতেই হবে।

গুরুতর অবস্থায় করণীয়

  • গুরুতর ব্যথায় অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ সেবন করতে হবে।
  • চিকিৎসা ব্যবস্থার পাশাপাশি চিকিৎসকের দ্বারা রোগীকে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, লাম্বার ট্রাকশন ও বিভিন্ন ব্যায়াম করাতে হবে।
  • দীর্ঘদিন মেডিসিন চিকিৎসা চালানোর পরও রোগীর অবস্থার পরিবর্তন না হয় তবে রোগীর অবস্থা অনুযায়ী কোমর- মেরুদণ্ডের অপারেশন বা সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে ।

তথ্যসুত্র - উইকিপিডিয়া এবং জি নিউজ 

আরও কিছু তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে যুগান্তর পত্রিকা থেকে ,

যার লেখকঃ - বিভাগীয় প্রধান, ফিজিওথেরাপি বিভাগ, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা

Post a Comment

0 Comments

Ads 4