Auto Ads 1

আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং পুষ্টি উপাদান


আনারস এক ধরনের গুচ্ছফল। আনারসের ইংরেজি নাম - Pineapple, Anannas, Ananus, Bahunetraphalam, Anamnasam। ফলে ফলের বৈজ্ঞানিক নামঃ Ananas comosus (L.) Merr. আনারসের আদি জন্মস্থল মহাদেশ দক্ষিণ আমেরিকাতে । তবে বর্তমানে ক্রান্তীয় অঞ্চলে বিশ্বের সর্বত্রই এই ফল চাষের ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। ব্রাজিল  কোস্টারিকা, এবং ফিলিপিন্স এই তিনটি দেশ একত্রে বিশ্বের সমগ্র আনারস উৎপদনের প্রায় এক তৃতীয়াংশ উৎপাদন করে থাকে ।

দেহের পুষ্টি সাধন এবং দেহকে সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত রাখার জন্য আনারস অতুলনীয় এবং কার্যকরি একটি ফল। তাই আমাদের কিছু নিয়ম কানুন মেনে আনারস খাওয়া উচিত।

আনারসের পুষ্টি উপাদান

প্রতি ১০০ গ্রাম আনারসে আছে

  • ক্যালোরি - ৫০
  • লিপিড - ০.১ g
  • সম্পৃক্ত চর্বি - ০g
  • কোলোস্টেরল - ০ mg
  • সোডিয়াম - ১ mg
  • পটাশিয়াম - ১০৯ mg
  • শর্করা - ১৩ g
  • খাদ্য আশ - ১.৪ g
  • প্রোটিন - ০.৫ g
  • ভিটামিন সি - ৪৭.৮ 
  • ক্যালসিয়াম - ১৩ mg
  • লোহা - ০.৩ mg
  • ভিটামিন ডি ০ IU
  • পাইরিডক্সিন - ০.১ mg
  • সায়ানোকোবালে - ০
  • ম্যাগনেসিয়াম - ১২ mg

আনারস ঔষধিগুণসম্পন্ন একটি ফল।

আনারসে থাকা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড শরীরে ভিটামিন সি'র চাহিদা পূরণ করে থাকে, যা মানব দেহের সংক্রমণ রোগ প্রতিরোধে করতে খুবই প্রয়োজন।

আনারস জ্বর-ঠাণ্ডা সারাতে বেশ কার্য্যকরি ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া এই ফল হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে, ক্ষত সারাতেও এই ফলের জুড়ি নেই, হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এই ফল ও পেশির ব্যথাসহ রক্তকে হঠাৎ করে জমাট বাঁধতে দেয় না ।


আরও জানুন 👇

ডিমের পুষ্টিগুন ও ডিমের উপকারিতা এবং ডিম খাওয়ার সঠিক নিয়ম
জাম খাওয়ার উপকারিতা ও জামের পুষ্টি উপাদান
কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা । ঘরে বসেই কিসমিস তৈরির নিয়ম
তেলের উৎপন্ন ও প্রকারভেদ এবং তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা ?

আনারসের উপকারিতা

ওজন কমায়

শুনতে অবাক লাগলেও আনারস ওজন কমাতে সাহায্য করে। কারণ আনারসে প্রচুর ফাইবার এবং অনেক কম ফ্যাট রয়েছে। সকালে আনারস বা সালাদ হিসেবে এর ব্যবহার অথবা আনারসের জুস অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর।

ত্বকের যত্নে

আনারসে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, বিটা ক্যারোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের ডেড সেল দূর করে, ত্বককে কুঁচকে যাওয়া থেকে বাঁচায়, অ্যান্টিএজিংয়ের কাজ করে এবং ত্বকে কোলাজেন তৈরি করে ইলাসটিসিটি ধরে রাখে। এ ছাড়া তৈলাক্ত ত্বক, ব্রণসহ সব রূপ লাবণ্যের যত্নে আনারসের যথেষ্ট কদর রয়েছে।

উচ্চরক্ত চাপ কমাতে

আনারসে থাকা ব্রোমেলিন উচ্চরক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। অ্যাসপিরিনের বিকল্প হিসেবেও কাজ করে আনারস।

ভাইরাস জনিত রোগ সারাতে

প্রচুর ভিটামিন সি ভাইরাসজনিত ঠাণ্ডা ও কাশি কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া জ্বর ও জন্ডিসের প্রকোপ কমাতে আনারস বেশ উপকারী। নাক দিয়ে পানি পড়া, গলাব্যথা এবং ব্রংকাইটিসের বিকল্প ওষুধ হিসেবে আনারসের রস কাজ করে।

ক্যানসার প্রতিরোধক

আনারসে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ আনারাস ফ্রি রেডিক্যালস ধ্বংস করে ও সেল ড্যামেজ রোধ করে। এটি অথেরোসক্লেরোসিস, হৃদরোগ, আর্থ্রাইটিস ও বিভিন্ন প্রকার ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা তৈরি করতে সাহায্য করে।

দাঁতে ও মাড়ির যত্নে

আনারসের ক্যালসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ দাঁতের সুরক্ষায় কাজ করে। মাড়ির যে কোনো সমস্যা সমাধান করতে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন আনারস খেলে দাঁতে জীবাণুর আক্রমণ কম হয় এবং দাঁত ঠিক থাকে। তবে যাদের দাতে কেভিটিস ও জিংজাইভেটিভস এর সমস্যা আছে তাদের আনারস না খাওয়াই ভালো।

মানব দেহের পুষ্টির অভাব পূরন করতে

পুষ্টিগুণে ভরপুর ফল হচ্ছে এ আনারস। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, থিয়ামিন, রিবোফ্লাভিন, ভিটামিন বি-৬, ফোলেট, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও বিটা ক্যারোটিন। এসব অপরিহার্য উপাদান দেহের পুষ্টির অভাব পূরণ করতে বেশ কার্য্যকর ভূমিকা রাখে।

চোখের যত্নে

গবেষকগণ বিভিন্ন গবেষণায় দেখেছেন, আনারস ম্যাক্যুলার ডিগ্রেডেশন হওয়া থেকে রক্ষা করে। এই রোগটি আমাদের চোখের রেটিনা নষ্ট করে দেয় এবং ধীরে ধীরে অন্ধ পর্যন্ত করে দেই। আনারসে রয়েছে বেটা ক্যারোটিন যা চোখের জন্য অনেক উপকারি। প্রতিদিন আনারস খেলে ডিগ্রেডেশন হওয়ার সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। আর সুস্থ থাকে আমাদের চোখ।

আনারস খাওয়ার অপকারিতা

অ্যালার্জীর সমস্যায়

যাদের অ্যালার্জীর সমস্যা আছে তাদের আনারস খাওয়ার ফলে দেহে অ্যালার্জী দেখা দিতে পারে। আনারস খাওয়ার ফলে যে অ্যালার্জী দেখা দেই সেই অ্যালার্জীর উপসর্গগুলো হল ঠোঁট ফুলে যাওয়া ও গলায় সুরসুরি বোধ হওয়া। অ্যালার্জীর সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে আনারস খাওয়ার আগে আনারস কেটে লবণ পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নেয়া উচিত। ভালোকরে ধুয়ে নিয়ে খেলে কোন সমস্যা হওয়ার সম্ভবনা থাকেনা।

নারীদের গর্ভাবসস্থায় আনারস খাওয়া উচিৎ নয়

আনারসের কারণে নারীদের গর্ভপাত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। গর্ভাবস্থায় থাকলে নারীদের আনারস খেতে বারণ করা হয়। তাছাড়া গর্ভাবস্থার পরে চাইলে আনারস খেতে পারেন কিন্তু শরীরের অবস্থা বুঝে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে। 

বাতের ব্যথায়

যখন আপনি আনারস খাবেন তখন এটি আপনার গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল নালীর কাছে পৌঁছানোর পর এটি অ্যালকোহলে পরিনত হয়। এবং এই কারণে মানুষের দেহে বাতের ব্যথা শুরু হতে পারে। তাই যে সকল মানুষের দেহে বাতের ব্যথা আছে কিংবা সন্দেহ করা হচ্ছে বাত হতে পারে তাদের আনারস না খাওয়াটাই ভালো।

বমি প্রবণতা

অনেকেই কাঁচা আনারস ব্যবহার করে থাকেন জুস বানানোর জন্য কিন্তু এটি দেহের জন্য ক্ষতিকর এবং খুব বিষাক্ত। এবং মাঝে মাঝে কাঁচা আনারস খাওয়ার কারণে বমির প্রবণতা দেখা দেয়।

এসিডিটি 

কাঁচা আনারসে আছে অনেক বেশি পরিমানে এসিডিটি যা আমাদের মুখের ভিতর ও গলায় শ্লেষ্মা তৈরি করে। অনেকের ক্ষেত্রে আবার এই ফলটি খাওয়ার পর পেটে ব্যথাও হতে পারে।

আরও পড়ুন 👇


আনারসের উৎপাদন

২০১৮ সালে সারা বিশ্বে আনারসের উৎপাদন ছিল ২৭৯ লক্ষ টন। সবথেকে বেশি উৎপাদন করছিল কোস্টা রিকা। এরপর বৃহত্তম উৎপাদক হিসাবে যথাক্রমে রয়েছে ফিলিপাইন, ব্রাজিল এবং থাইল্যান্ড।

তথ্যসূত্র- উইকিপিডিয়া  যুগান্তর

চিত্রসূত্র - SHVETS production from Pexels

Post a Comment

0 Comments

Ads 4