যশোর জেলার ইতিহাসঃ
যশোর একটি অতি প্রাচীন জনপদ। আনুমানিক ১৪৫০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে পীর খান জাহান আলীসহ বারজন আউলিয়া যশোরের মুড়লীতে ইসলাম ধর্ম প্রচারের প্রধান কেন্দ্র স্থাপন করেন। ক্রমে এ স্থানে মুড়লী কসবা নামে একটি নতুন শহর গড়ে উঠে । ১৫৫৫ খ্রীস্টাব্দের দিকে যশোর রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। যশোর-খুলনা-বনগাঁ এবং কুষ্টিয়া ও ফরিদপুরের অংশ বিশেষ যশোর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। ১৭৪৭ খ্রিষ্টাব্দের দিকে যশোর নাটোরের রাণী ভবানীর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৭৮১ খ্রিষ্টাব্দে যশোর একটি পৃথক জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে । ১৮৬৪ সালে ঘোষিত হয় যশোর পৌরসভা। ১৮৩৮ খ্রিষ্টাব্দে যশোর জিলা স্কুল, ১৮৫১ খ্রিষ্টাব্দে যশোর পাবলিক লাইব্রেরি, বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় ও চতুর্থ দশকে যশোর বিমান বন্দর এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে কলকাতার সাথে যশোরের রেল-যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম স্বাধীন হওয়া জেলাটি যশোর।
যশোর জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগের একটি প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন অঞ্চল। এবং যশোর জেলার সবচেয়ে বড় প্রধান শহর যশোর । উপজেলার সংখ্যানুসারে যশোর বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা।এর অন্য একটি প্রচলিত বানান যশোহর। ব্রিটিশ আমলে খুলনা ছিল যশোর জেলার অধিভুক্ত একটি মহুকুমা।যশোর বাংলাদেশের প্রথম শত্রু মুক্ত জেলা.যশোর বিমান বন্দরের সাহায্যে দেশের অভ্যন্তরে যাতায়াত করা হয়।ফুলের রাজধানী যশোর অবস্থিত।যশোর শহর ভৈরব নদের তীরে অবস্থিত।
যশোর জেলার নামকরণ
যশোর নামের উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত মেলে। ঐতিহাসিকদের মধ্যে এই জেলার নামকরণ সম্পর্কে মতবিরোধ দেখা যায়। আরবি ‘জসর’ থেকে যশোর শব্দের উৎপত্তি বলে মনে করেন অনেকে। এর অর্থ সাঁকো। এককালে যশোরের সর্বত্র নদীনালায় পরিপূর্ণ ছিল। নদী বা খালের ওপর সাঁকো বানানো হতো। পীর খানজাহান আলী বাঁশের সাকো নির্মাণ করে ভৈরব নদী পেরিয়ে মুড়লীতে আসেন বলে জানা যায়। এই আরবি শব্দ 'জসর' (বাংলায় যার অর্থ বাঁশের সাঁকো) থেকে যশোর নামের উৎপত্তি। অনুমান করা হয় কসবা নামটি পীর খানজাহান আলীরই দেওয়া (১৩৯৮ খৃঃ)। তবে অনেকের অভিমত, খানজাহান আলী আসার আগে থেকেই ‘যশোর’ নামটি ছিল।
আবার অন্য একটি সূত্র হতে জানা যায় যে- মহারাজ প্রতাপাদিত্যের পিতা বিক্রমাদিত্য ও তার এক সহযোগি বসন্ত রায় গৌড়ের এক চরম অরাজকতার সময় সুলতানের অপরিমিত ধনরত্ন নৌকা বোঝাই করে গোপনে এই এলাকায় প্রেরণ করেন। গৌড়ের ধনরত্ন বোঝাই অসংখ্য নৌকা এখানে পৌঁছানোর পর ধীরে ধীরে বন জঙ্গলে আবৃত্ত এলাকাটির খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো। প্রতিষ্ঠিত হলো একটি সমৃদ্ধ রাজ্য। নবপ্রতিষ্ঠিত রাজ্যের নামকরণ হল যশোহর। প্রবাদ আছে, গৌড়ের যশ হরণ করে এই এলাকার শ্রীবৃদ্ধি হওয়ায় নবপ্রতিষ্ঠিত রাজ্যের নাম যশোহর রাখা হয়। স্থানীয় পুরাতন নাম যশোর পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন নামকরণ হয় যশোহর। 'যশোর' শব্দটি 'যশোহর' শব্দের অপভ্রংশ।
যশোরের ভৌগোলিক সীমানাঃ
উত্তরে ঝিনাইদহ জেলা ও মাগুরা জেলা, দক্ষিণ পূর্বে সাতক্ষীরা জেলা, দক্ষিণে খুলনা জেলা, পশ্চিমে ভারত। পূর্বে নড়াইল জেলা।
যশোরের প্রশাসনিক এলাকাসমূহঃ
এ জেলায় ৮টি উপজেলা রয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় একটি পুলিশ থানা রয়েছে এবং একটি পোর্ট থানা রয়েছে।
- যশোর সদর উপজেলা
- অভয়নগর উপজেলা
- কেশবপুর উপজেলা
- চৌগাছা উপজেলা
- মনিরামপুর উপজেলা
- শার্শা উপজেলা
- বেনাপোল পোর্ট থানা
- ঝিকরগাছা উপজেলা
- বাঘারপাড়া উপজেলা
- পাকা রাস্তাঃ ১০৫৯.০০ কিঃ মিঃ
- কাঁচা রাস্তাঃ ৫০৯৭.০০ কিঃ মিঃ
- আধা-পাকা রাস্তাঃ ৪৪১.০০ কিঃ মিঃ
- রেল পথঃ ৯১ কিঃ মিঃচ
- রেল ষ্টেশনঃ ১১ টি
যশোরের অর্থনীতি
শিল্পঃ
যশোর জেলা বহুপূর্ব থেকেই কুটিরশিল্পে একটা বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। এ জেলার একসময়কার বিখ্যাত চিরুনী শিল্প এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। ধীরে ধীরে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। এদের মধ্যে নওয়াপাড়া ভারী শিল্প কারাখানা যেমন-পাটকল ও সার কারখানা, সিমেন্ট ফ্যাক্টরী, বস্ত্রশিল্প, সিগারেট ফ্যাক্টরী, বিসিক শিল্প নগরী, কুটির শিল্প গুলোর মধ্যে তাঁত, খেজুরের গুড়, মৃত্তিকা, বাঁশ, বেত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠিত জি, কিউ বলপেন ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড এর কলমের সুনাম দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে পৌঁছেছে।
ক্ষুদ্র শিল্পঃ ১২৩ টি
ভারী শিল্পঃ ৯ টি
প্রধান প্রধান শিল্প কারখানাঃ সার, সিমেন্ট, পাট, বস্ত্র, চামড়া, ডিম উৎপাদন,
বিড়ি উৎপাদন, মৎস্য হ্যাচারী, বল সাবান, ডাল ও
ময়দা মিল।
যশোরের কৃষিঃ
যশোরবাসীর প্রধান জীবিকা ও অর্থনীতির মূল ভিত্তিই হচ্ছে কৃষি। এ জেলার উৎপাদিত ফসলগুলোর মধ্যে ধান, ইক্ষু ও পাট প্রধান। শাকসবজি উৎপাদনের ক্ষেত্রে এ জেলা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। এখানে উৎপাদিত সবজিগুলি মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো ফুলকপি, বাধাঁকপি, ওলকপি, মূলা, বেগুন, সীম, পেঁপে, পটল, টমেটো, লাউ, ওল, কচু, আলু, পিয়াজ, মরিচ, লালশাক, সবুজশাক, পালংশাক, মিষ্টিকুমড়া ইত্যাদি। কলা ও খেজুর গুড়ের জন্য এ অঞ্চল বিখ্যাত। এ জেলায় বাণিজ্যিক ভাবে ফুলের উৎপাদন শুরু হয়েছে এবং উৎপাদিত ফুল রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার ফুলের চাহিদা মিটিয়ে থাকে। যশোর জেলায় প্রায় সকল প্রকার মাছ পাওয়া যায়। তার মধ্যে রুই, কাতলা, মৃগেল, শিং, মাগুর, কই, পুটি, চিংড়ি ইত্যাদি। অন্যতম তাছাড়া যশোরের মৎস্য হ্যাচারীগুলো সমগ্র দেশের পোনামাছের চাহিদার এক তৃতীয়াংশ পূরণ করে থাকে।
কৃষি ও সেচঃ
জেলার প্রধান প্রধান ফসলঃ ধান, পাট, ইক্ষু, গম জেলার প্রধান প্রধান রবি শস্যঃ সরিষা, মশুর, কলা, শাক-সবজি
চিংড়ি চাষঃ
যশোরের অথনীতিকে বেগবান করেছে মাছ চাষ। যশোরের অর্থনীতির সিংহভাগই আসে মাছ চাষ তথা চিংড়ি রফতানি করে।
বেনাপোল স্থল বন্দরঃ
যশোরের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেনাপোল স্থল বন্দর যা শার্শা উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম বেনাপোলে অবস্থিত। ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যের সিংহভাগ এর মাধ্যমে সংঘটিত হয়। ওপারে আছে পেট্রাপোল। সরকারি আমদানী শুল্ক আহরণে বেনাপোল স্থল বন্দরটির ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ। এখানকার মানুষের জীবিকার অন্যতম সূত্র বেনাপোল স্থল বন্দরের কাস্টমস্ ক্লিয়ারিং এজেন্টের কাজ ।বেনাপোল সম্পর্কে আরো জানতে পারবেন বেনাপোল প্রতিদিন অনলাইন নিউজ পোর্টালে।
নওয়াপাড়াঃ
যশোরের ব্যবসা বাণিজ্যর প্রাণ কেন্দ্র বলা যায় নওয়াপাড়াকে। এখানকার এবং আশেপাশের উদ্যোক্তাদের কারণে এখানে বিভিন্ন শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠেছে। এছাড়া নৌপথে আমদানি রপ্তানি হয়ে থাকে। যা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখে ।
গদখালিঃ
বাংলাদেশের ফুলের রাজধানী যশোর। বাংলাদেশের অধিকাংশ ফুল মূলত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালিতে চাষ হয়। এখানে উৎপাদিত ফুল সারাদেশে সরবরাহ করা হয়।
যশোরের নদ-নদীঃ
- ভৈরব নদ
- ভৈরব ব্রীজ
- কপোতাক্ষ নদ
- বেতনা নদী
- চিত্রা নদী
- হরিহর নদ
- ঝাঁপা বাওড়
- ভবদহ বিল
- শার্শা কন্যাদাহের আশ্চর্য বাওড়
- পদ্ম বিল চাকলা
- কালিয়ানীর বিল বা বাহাদুরপুর বাওড়
- বুকভরা বাওড়
- বঙ্গবন্ধু ভাসমান সেতু
যশোর জেলার শিক্ষা ব্যবস্থা
১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে সময় হতেই যশোর শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠান আছে এ জেলায়। যশোরে নির্মিত হয়েছে। দক্ষিণ বঙ্গের সর্ববৃহৎ আইটি প্রতিষ্ঠান
সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ঃ৬৭৬ টি
সম্প্রতি সরকারিকরনঃ ৬০৯টিপ্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু ভর্তির হারঃ ১০০%
প্রাথমিক শিক্ষা হতে ঝড়ে পড়া শিশু হারঃ ৮.১৫%
প্রাথমিক উপবৃত্তি প্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাঃ ১,৭৭,৪৪৬ জন
শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক"। এছাড়া উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা নিচে দেয়া হলোঃ
- যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
- ডাঃ আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ, যশোর
- যশোর মেডিকেল কলেজ
- যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ
- বি এ এফ শাহীন কলেজ,
- সরকারী এম. এম. কলেজ সরকারী মাইকেল মধুসুদন কলেজ-১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে।
- যশোর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট
- যশোর জিলা স্কুল-১৮৩৮ খ্রিষ্টাব্দে
- যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
- সম্মিলনী ইনস্টিটিউশন যশোর-১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে
- দাউদ পাবলিক স্কুল
- যশোর শিক্ষা বোর্ড মডেল স্কুল এন্ড কলেজ
- বিমান বাহিনী একাডেমী, বাংলাদেশের একমাত্র বিমান বাহিনী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
- মুনসেফপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় -১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে
- হামিদপুর আল-হেরা কলেজ,যশোর
- আমদাবাদ কলেজ
- যশোর আমিনিয়া কামিল মাদরাসা
- যশোর সরকারি সিটি কলেজ
- মশিয়াহাটী ডিগ্রী কলেজ
- মশিয়াহাটী বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়
- নেহালপুর স্কুল এন্ড কলেজ
- নওয়াপাড়া মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়
- নওয়াপাড়া শংকরপাশা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়
- নওয়াপাড়া ডিগ্রী কলেজ
- আকিজ কলেজিয়েট স্কুল
- মণিরামপুর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়
- মণিরামপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়
- চাড়াভিটা মাধ্যমিক বিদ্যালয় -১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে
- মনিরামপুর কারিগরি ভোকেশনাল ইন্সটিটিউ,
- রায়পুর স্কুল এন্ড কলেজ, বাঘারপাড়া
- কয়ালখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিয়ালপাড়া
- মনিরামপুর কলেজ,
- মনিরামপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ,
- বরভাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়,বাঘারপাড়া
- বাঘারপাড়া পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়,বাঘারপাড়া
- ঝিকরগাছা এম.এল মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ঝিকরগাছা, যশোর ১৮৮৮ সালে
- ঝিকরগাছা বি এম মাধ্যমিক বিদ্যালয়
- চৌগাছা কামিল মাদ্রাসা
- চৌগাছা শাহাদৎ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যারয়,
- চৌগাছা হাজী সরদার মর্ত্তজ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়,
- চৌগাছা সরকারী কলেজ,
- চৌগাছা মৃধাপাড়া মহিলা কলেজ,
- এবিসিডি কলেজ,
- এস এম হাবিব কলেজ,
- ভবদহ মহাবিদ্যালয়
- পদ্মবিলা ফাযিল(ডিগ্ৰি)মাদরাসা,১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দ
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলের ক্ষেত্রে যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ যশোর জেলায় শীর্ষস্থান লাভ করেছে। পাসের হার ৯৭.৬৩%। - মাধ্যমিক বিদ্যালয়ঃ ৫২১ টি
- রেজি: কিন্ডারগার্টেনঃ ৩৫টি
- এবতেদায়ী মাদ্রাসাঃ ৪০টি
- নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ঃ ৬৫ টি
- মহাবিদ্যালয়ঃ ৮৯ টি
- বিশ্ববিদ্যালয়ঃ ১টি
- মেডিকেল কলেজঃ ১টি
- মাদ্রাসাঃ ৩১০ টি
- কলেজিয়েট হাইস্কুলঃ ১৫ টি
- কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রঃ ১ টি
- টিচার্স ট্রেনিং কলেজঃ ১ টি
- পিটিআইঃ ১ টি
0 Comments