Auto Ads 1

পুঁইশাকের উপকারিতা ও অপকারিতা



আমাদের বাঙালীদের একটা প্রবাদ আছে—মাছের মধ্যে রুই , শাকের মধ্যে পুঁই । দেশের জনপ্রিয়, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর অনেক ধরনের শাকের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পুঁইশাক। বাজারে সবসময় কমবেশি পুঁইশাক পাওয়া যায়। ইলিশ মাছ ও পুঁইশাক এবং চিংড়ির সাথে পুঁই এটি বাঙালিদের অতি জনপ্রিয় একটি খাবার। অনেক পুষ্টিগুনে ভরা এবং ভিটামিনসমৃদ্ধ এই পুইশাক যেমন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে আবার আমাদের ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতেও বেশ কার্য্যকর ।

পুইশাকের পরিচিতি

পুঁইশাক এটি লতাজাতীয় উদ্ভিদ। পুঁইগাছের পাতা এবং ডাঁটা দুটিকেই শাক হিসেবে খাওয়া হয় । এটি নরম এবং বহুশাখাযুক্ত উদ্ভিদ। এই শাকের মাংসল লতা দ্রুত বৃদ্ধি পায়, এই শাক দৈর্ঘ্যে প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত হতে দেখা যায়। পুঁইয়ের মোটা, রসাল, হরতন আকৃতির পাতায় মৃদু সুগন্ধ আছে। পাতা মসৃণ, খানিকটা পিচ্ছিল ধরনের হয়ে থাকে এই শাক দুই ধরনের। একটি সবুজ পাতা ও ডাঁটা হালকা সবুজ। অন্যটি সবুজ পাতা কিন্তু কাণ্ড বা ডাঁটা লালচে বেগুনি রঙের দেখা যায়, যা লাল পুঁই হিসেবে পরিচিত।

পুঁইশাকের পুষ্টি উপাদান

পরিবেশন আকার: ১০০ গ্রাম পরিবেষনার ধরন: ৪ কাপ

ক্যালরি: ২৫ কিলোক্যালরি
শর্করা: ২.১ গ্রাম
ফ্যাট: ০.৩ গ্রাম
ভিটামিন সি: ৫১.৮ মিলিগ্রাম
ভিটামিন এ: ১৭০ I.U. (আন্তর্জাতিক একক)
প্রোটিন: ২.৪ গ্রাম
পানি: ৯১.৮ গ্রাম


কেন পুঁই শাক উপকারী

পুঁই শাক আমাদের চারপাশে প্রচুর হয়। বাড়ির আঙ্গিনাতেই এই শাক লাগানো যায় । ছোট্ট একিটি বানেই যে পরিমান পুইশাক হয় তাতেই আমাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনীও পুষ্টি পাওয়া যায় । এতে আছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন বি, সি ও এ। এবং আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও আয়রণ। যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন । প্রচুর ভিটামিন থাকার জন্য আমরা অনেক রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারি। এছাড়া পুইশাকে রয়েছে ফলিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম, জিঙ্ক এবং খনিজ পদার্থ ।

আরও জানুন -

মধু খাওয়ার নিয়ম এবং মধুর অসাধারণ গুনাগুন

তুলসী পাতার উপকারিতা ও তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম

লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও লেবুর পুষ্টিগুন

গরম পানি খাওয়ার নিয়ম ও গরম পানির উপকারিতা

লাল চা খাওয়ার নিয়ম ও লাল চায়ের উপকারীতা

বৃষ্টির পানির উপকার ও ব্যবহারের নিয়ম

দাতের ব্যথায় করনীয় এবং ঘরোয়া টোটকামাইগ্রেন কি কেনো হয় এবং হলে করনীয় কি

পুঁই শাকের উপকারিতা

অন্যান্য শাকের মতো এই শাকেও রয়েছে অনেক ভিটামিন এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, লোহা এবং ক্যালসিয়াম । আমিষের পরিমাণও রয়েছে বেশি। এ ছাড়াও এই শাকে আঁশের পরিমাণও অনেক বেশি।

১. ওজন কমাতে সাহায্য করে পুঁইশাক

পুঁইশাকে থাকা ভিটামিন সি এবং আয়রন সমৃদ্ধ মেটাবলিজম বা বিপাক ক্রিয়া সহজ করে ক্যালরি ক্ষয় করতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত মোটা হলে নিয়মিত পুঁইশাক খাওয়া বেশ উপকারি, কারণ পুইশাকে ওজন কমানোর উপাদান রয়েছে।

২. এনার্জি বাড়ায়

আজকের এই বর্তমান যুগে আমাদের সবাইকে অনেক কাজ করতে হয় এবং আর তার জন্য দরকার প্রচুর এনার্জি। পুঁই শাক এনার্জি বাড়াতে সাহায্য করে। পুঁই শাকে থাকা ম্যাগনেসিয়াম এনার্জি বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। পুঁই শাক ফোলেটের একটি ভালো উৎস যা খাবারকে এনার্জিতে রূপান্তরিত করে। তাছাড়া পুঁই হল ন্যাচারাল অ্যালকালাইন যা সারাদিন আমাদের এনার্জেটিক ধরে রাখতে বেশ কার্য্যকরি।

৩. হজমের ক্ষমতা বাড়ায় পুঁইশাক

কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে দূরে রাখতে পুঁইশাক বেশ উপকারি । পুইশাকে ফাইবার থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য হতে দেয়না, আমাদের বাঙালিদের মধ্যে গ্যাসের সমস্যা একটি কমন সমস্যা । কিন্তু পুঁই শাক এই সমস্যা থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে। এটি হজম ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়। যেহেতু খাবার ভালোভাবে হজম হয় তাই বদহজমের সমস্যা হয় না।

৪. ডায়াবেটিস কমাতে পুইশাক

পুঁই শাকে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যার পুর্ননাম লিপোইক অ্যাসিড। এই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে আর ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখতে বেশ ভুমিকা আখে । এটি প্রমাণিত হয়েছে যে ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি আর অটোনমিক নিউরোপ্যাথি কমায়। অর্থাৎ বলা যেতেই পারে যে এই পুইশাক ডায়াবেটিস কমাতে বেশ কার্য্যকরি ভুমিকা পালন করে।

৫. ক্যানসার প্রতিরোধে পুইশাক

অন্যান্য সবুজ শাক ও সবজির মতো পুঁই শাকেও রয়েছে ক্লোরোফিল। গবেষণা করে গবেশকগণ বলেছেন, এই ক্লোরোফিল কিন্তু কার্সিনোজেনিক প্রভাব আটকাতে খুব ভালো কাজ করে। এই কার্সিনোজেনিকের প্রভাবেই ক্যানসার হয়। আর এই কার্সিনোজেনিক প্রভাব হয় খুব বেশি মাত্রায় কিছু গ্রিল করলে। আর এতে থাকা ফাইবার পাকস্থলী আর কোলন ক্যানসার প্রতিরোধ করে। তবে পুঁই শাক কিন্তু ক্যানসার দূর করতে বেশ কার্য্যকরি একটি উদ্ভিদ। পুঁইশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ বা ফাইবার, যা পাকস্থলী ও কোলন ক্যানসার প্রতিরোধ করতে বেশ কার্য্যকরি ।

৬. শিশুদের বৃদ্ধি বাড়াতে পুঁইশাক

শিশুদের বাড়ন্ত বয়সে যদি নিয়মিত পুঁই শাক খাওয়ানো যায় তাহলে  ওই সকল শিশুদের বৃদ্ধি ভালো হয়। শিশুরা তাদের বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয়  ভিটামিন, মিনারেল ও প্রোটিন  পুঁই শাক থেকে পেতে পারে। তাই বাচ্চাদের ছোট থেকেই পুঁই শাক খাওয়ানোর অভ্যেস অনেক উপকারি ।

৭. চোখ ভালো রাখে

চোখ আমাদের শরীরের অত্যন্ত সুক্ষ্ম একটি অঙ্গ। তাই চোখের আলাদা করে যত্ন নেওয়া খুবই দরকার। পুঁই শাক কিন্তু চোখ ভালো রাখতেও বেশ কার্যকরী। পুঁই শাকে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন, লুটেইন আর এই সব উপাদান চোখের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে খুবই কার্য্যকরি। লুটেইন থাকে ম্যাকুলায় যেটি রেটিনার একটি অংশ আর এটি অতিরিক্ত আলোর প্রভাব থেকে চোখকে ভালো রাখে। মেক্যুলার ডিজেনারেশনের থেকেও চোখকে রক্ষা করে থাকে ।

৮. ব্লাড প্রেসার কমায়

পুঁই শাক পটাসিয়ামের ভালো একটি  উৎস। পটাশিয়াম শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা ঠিক রাখে। তাই পুঁই শাক কম খাওয়া মানে শরীরে পটাশিয়াম কম আসা আর তার ফলে ব্লাড প্রেসারকে সঙ্গী করা। নিয়মিত পুঁইশাক খেলে আমাদের ব্লাড প্রেসার ঠিক থাকে ।

৯. হাড় শক্ত করে

পুইশাকে রয়েছে ভিটামিন কে, আমাদের হাড় শক্ত করতে সাহায্য করে এই ভিটামিন কে। তাই ভিটামিন কে শরীরে কম প্রবেশ করা মানে হাড়ের মজবুতি কমে যাওয়া। পুঁই শাক ভিটামিন কে’র একটি খুব ভালো উৎস। ভিটামিন কে হাড়ের মেট্রিক্স প্রোটিন উন্নত করে। ক্যালসিয়াম ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি, ইউরিনে ক্যালসিয়ামের মাত্রাও ক্মইয়ে দেই। তাই হাড়ের শক্তি বাড়ানো জন্য পুঁইশাক অত্যন্ত কার্য্যকরি একটি উদ্ভিদ ।

১০. স্বাস্থ্যকর চুল আর ত্বকের জন্য

পুঁই শাকে আছে ভিটামিন এ, যা আমাদের ত্বকের আর স্ক্যাল্পের তেল নিঃসরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। ময়েশ্চার ধরে রাখে। অতিরিক্ত তেল বা সিবাম নিঃসরণ হলে ব্রণ হয়। পুঁই শাক যেহেতু এই নিঃসরণ কমায় তাই ব্রণ হয় না। ত্বকের কোষ কোলাজিনের জন্য যে ভিটামিন সি এতো দরকারি, সেই ভিটামিন সি’র উৎস এই পুঁই শাক।

১১. শুক্রানুর সক্রিয়তা বৃদ্ধি করে

পুঁইশাক খাওয়ার ফলে শুক্রানুর সক্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পায়। সবুজ শাক-সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড, জিঙ্ক ,আয়রনএবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা শুক্রানুকে সুস্থ-সবল রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

পুঁইশাকের অপকারিতা

পুঁইশাকের কিছু অপকারিতাও রয়েছে।যাদের এর্লাজির সমস্য রয়েছে তারা বেশি পরিমানে এই শাক খেলে এর্লাজির মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।পুঁইশাক অক্সালেটস সমৃদ্ধ, এটি গ্রহণ করলে আমাদের শরীরের তরল পদার্থে অক্সালেটস এর পরিমাণ বেড়ে যায় এবং এর ফলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। পুঁইশাকে পিউরিন (purines) নামক উপাদান রয়েছে যা অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে শরীরে ইউরিক এসিড (uric acid) বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে গেঁটেবাত,কিডনীতে পাথর ইত্যাদি রোগ হতে পারে। কিডনি এবং পিত্তথলির বিভিন্ন সমস্যায় যারা ভুগছেন, তাদের অবশ্যই পুঁইশাক খাওয়ার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ

পুঁইশাকের কিছু এক্সট্রা টিপস


পুঁইশাকের আছে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি গুণ। শরীরের কোনো অংশ আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ফুলে গেলে পুঁইশাকের শিকড় বেটে লাগালে দ্রুত উপশম হয়।

শরীরে খোসপাঁচড়া কিংবা ফোঁড়ার মতো অনাবশ্যক সংক্রমণের বিরুদ্ধেও লড়তে পারদর্শী পুঁইশাক।

যাঁদের প্রায় প্রতিদিনই মাথাব্যথা থাকে, নিয়মিত পুঁইশাক খেলে তাঁরা উপকার পাবেন খুব দ্রুত। তাই পরিবারের সবার স্বাস্থ্যসচেতনতায় খাদ্যতালিকায় নিয়মিত রাখুন পুঁইশাক

Post a Comment

0 Comments

Ads 4