বাদাম বহুল পরিচিত একটি ফল। যা কোন উদ্ভিদের বড়, শুষ্ক এবং তৈলাক্ত বীজ অথবা ফলকে বোঝায়। যদিও অনেক উদ্ভিদের বীজ এবং ফলকে বাদাম হিসেবে ডাকা হয়, কিন্তু জীববিজ্ঞানীগণ বলেছেন এদের মধ্যে অল্প কিছু বীজ বা ফলকেই সত্যিকারের বাদাম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
একবিংশ শতাব্দীতে, বিশ্বব্যাপী উৎপাদনের অধিকাংশই কয়েক ডজন বাদামের অন্তর্ভুক্ত, প্রধান বাণিজ্যিক বাদামের জন্য নীচে বাদামের বিভিন্ন প্রকারভেদ দেখানো হলো ।
বাদামের বিভিন্ন প্রকারভেদ
- কাঠ বাদাম
- চীনা বাদাম
- কাজু বাদাম
- পাইন বাদাম
- পেস্তা বাদাম
- পিক্যান বাদাম
- চেস্টনাট বাদাম
- ব্রাজিলিয়ান বাদাম
- হ্যাজেলনাট বাদাম
বহুল পরিচিত ৩ ধরনের বাদামের বর্ননা নিচে দেয়া হলো
কাঠ বাদামের উপকারিতা
কাঠ বাদামের উৎপত্তি হয়েছে ইরান ও তার আশেপাশের এলাকায় । এই ফলটি আঁটিযুক্ত রসালো এবং শাঁসালো ফল, যার মধ্যে একটি বাইরের হুল এবং একটি শক্ত খোসা রয়েছে, আরও থাকে এন্ডোকার্প । যাতে একটি বীজ থাকে। ব্ল্যাঞ্চ করা বাদাম হল যার খোসাগুলি সরানো হয় যা বীজের আবরণকে নরম করার জন্য গরম জল দিয়ে চিকিত্সা করা হয়, যা পরে সরানো হয়।
কাঠবাদামে রয়েছে ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, জিংক, কপার, সেলেনিয়াম, আয়রন ও ম্যাগনেসিয়াম। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই বাদাম কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা কমায়, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, রক্তস্বল্পতা দূর করে। এটি চুল ও ত্বকের জন্য ভালো। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন একমুঠো করে কাঠবাদাম খেলে এই উপকারগুলো পেতে সাহায্য করবে আপনাকে। ( দৈনিক ইত্তেফাক )
চীনা বাদাম উপকারিতা
দক্ষিণ আমেরিকায় উদ্ভূত এবং ১০০০০ বছর ধরে এই চীনা বাদামের চাষ হয়ে আসছে বলে জানা যায়। গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে এই বাদাম ব্যাপকভাবে জন্মায়। উদ্ভিদ হল একটি লেগুম এবং ফল হল একটি কাগজের শুঁটি যাতে এক বা একাধিক বাদামের মতো বীজ থাকে।
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় চীনা বাদাম রাখলে শরিরের বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। চিনা বাদামে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, কার্বো-হাইড্রেট প্রোটিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, রয়েছে। প্রতিদিন একমুঠো করে চিনা বাদাম খেলে শরীরকে অনেক রোগ-বালাই থেকে দূরে রাখতে পারবেন।
প্রতিদিন রাতে ১০-১৫ টি বাদাম পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। চিনা বাদামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ডায়াবেটিস নির্মূলে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
চিনা বাদামে প্রচুর পরিমাণ বি৩ রয়েছে যা মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে থাকে। তাই নিয়মিত চিনা বাদাম বা এর মাখন খেতে পারেন, যা আপনার মস্তিস্ককে স্বয়ংক্রিয় বৃদ্ধি করে তোলে।
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একমুঠো বাদাম খেতে পারেন যা আপনার অতিরিক্ত ওজনের সমস্যাকে স্লিম করে তুলতে সাহায্য করবে। তাছাড়া চীনা বাদাম শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতেও সহায়তা করে। চিনা বাদামের থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট কঠিন কঠিন রোগগুলোকে দেহে বাসা বাধতে বাঁধা দিয়ে থাকে। (
তথ্যসূত্র - জাগো নিউজ ২৪ )
কাজু বাদামের উপকারিতা
উত্তর-পূর্ব ব্রাজিলে উদ্ভূত এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে কাজু বাদাম ব্যাপকভাবে জন্মায়। এই ফলটি একটি মোটা খোসাযুক্ত বাদাম, বীজ বহনকারী ড্রুপ যা একটি মাংসল ডাঁটার শীর্ষে জন্মে যা কাজু আপেল নামেও বেশ পরিচিতি ।
কাজুবাদামে তুলনামূলকভাবে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে, আমিষ ও স্নেহের পরিমাণ থাকে কম এবং রয়েছে ম্যাগনেশিয়ামও পর্যাপ্ত পরিমাণে। খাবারের মধ্যে আমরা যদি অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট গ্রহণ করি, সেগুলোর শোষণের হার বাড়াতে সহায়তা করে এই কাজু বাদাম।
কাজু বাদাম চিবিয়ে এবং রান্না করেও খাওয়া যায়। কাজু বাদাম সাধারনত রান্নায় স্বাদ বৃদ্ধি করে থাকে। বিশেষ করে ফিরনি, সেমাইয়ে মধ্যে দিয়ে রান্না করা হয় ।যা খাবার আরও সুস্বাদু করে তোলে ।
কাজু বাদামে এত পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে যে, যা রান্না করা মাংশে পাওয়া প্রোটিনের সমান প্রায় । এছাড়াও রয়েছে অনেক বেশি পরিমাণে ফাইবার কিন্তু শর্করার পরিমাণ কিছুটা কম রয়ছে কাজু বাদামে।
সুস্বাদু এই কাজু বাদাম রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিনসহ পুষ্টি উপাদানে। হাড়ের জন্য অনেক উপকারী এই কাজু বাদাম। পাশাপাশি ওজন কমাতেও সাহায্য করে, ডায়বেটিস রোগিদের জন্যও বেশ উপকারি কাজু বাদাম এবং হার্টকেও ভাল রাখতে সহায়তা করে । ( তথ্যসূত্র -
যুগান্তর )
কাচা বাদাম খাবো নাকি ভাজা বাদাম
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত কাঁচা বাদাম খেয়ে থাকেন তাদের শরীরে এমন কিছু উপাদান প্রবেশ করে যা একাধিক অসুস্থতা থেকে শরিরকে দূরে রাখতে সহায়তা করে। একইসঙ্গে আবার দেহকে কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেই।
কাঁচা বাদামের পুষ্টিগুণ হাড় গঠনে ও মাংসপেশি মজবুত রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে, ব্রেইনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ক্যানসার প্রতিরোধ ও ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্য্যকরি ভূমিকা রাখে। কাঁচা বাদামে রয়েছে ভিটামিন ই, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ম্যাংগানিজসহ, ফসফরাস, ক্যালোরি, ফ্যাট, কপার, ও ম্যাগনেসিয়াম, এবং নানান প্রভৃতির অনেক উপকারী উপাদান।
আসলে ভাজা বাদাম ও কাচা বাদাম দুই ধরনের বাদামেই রয়েছে বিশেষ উপকারিতা। তবে কিছু ক্ষেত্রে কাঁচা বাদামে ব্যাকটেরিয়া থাকে আর এই সকল ব্যাকটেরিয়া শরিরের জন্য ক্ষতিকর। আবার বান্দাম ভাজার পর কিছুটা পুষ্টিগুন হারিয়ে ফেলে ।
তবে কাঁচা বাদাম পরিষ্কার করে হালকা তাপে ভেজে নিলেই সকল ক্ষতিকর উপাদান দূর হয়ে যায়। অতিরিক্ত লবণ, চিনি কিংবা তেল দিয়ে বাদাম ভাজলে ওই বাদামের পুষ্টিগুন অনেকাংশেই কমে যায় । তাই খেয়াল রাখতে হবে বাদাম ভাজার সময় যেনো লবন চিনি তেল কোনোটাই মাত্রা অতিরিক্ত না হয় ।
তথ্যসূত্র - উইকিপিডিয়া - জাগোনিউজ২৪ - প্রথম আলো - যুগান্তর -
0 Comments