Auto Ads 1

ঢেঁড়সের উপকারিতা ও পুষ্টি উপাদান




ঢেঁড়শের আর এক নাম ভেন্ডি। মালভেসি পরিবারের এটি একটি সপুষ্পক প্রকারের উদ্ভিদ। ঢেঁড়শ বা ভেন্ডি গাছের কাঁচা ফলকেই সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। ঢেঁড়শের বৈজ্ঞানিক নাম Abelmoschus esculentus; অথবা Hibiscus esculentus L। ঢেঁড়স বা ভেন্ডি এই সবজিটি পৃৃৃথিবীর ক্রান্তীয় অঞ্চলশয়ে থাকে। ঢেঁড়শ গাছ একটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ, যা ২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। ভেন্ডির পাতা ১০-২০ সেঃমিঃ পর্যন্ত দীর্ঘ এবং চওড়া হয়ে থাকে। এর পাতায় থাকে ৫-৭টি অংশ । ঢেড়সের ফুল হয় ৪-৮ সেঃমিঃ চওড়া, পাঁপড়ির রঙ হয় সাদা এবং হলুদ, ঢেড়সের পাঁপড়ি থাকে ৫টি । প্রতিটি পাঁপড়ির কেন্দ্রে লাল বা গোলাপী বিন্দু থাকে। ঢেঁড়শ ফল ক্যাপসুল আকারের, প্রায় ১৮ সেমি দীর্ঘ, এবং এর ভেতরে অসংখ্য বিচি থাকে।

ঢেঁড়সের ইংরেজি নাম

ঢেড়শকে ইংরেজি নাম ওকরা (Okra)। আমেরিকার বাইরের ইংরেজিভাষী স্থানে এটি লেডিজ ফিঙ্গার (Lady's Fingers) নামেও পরিচিত,। কোনো কোনো স্থানে, যেমন আমেরিকার কিছু অংশ এবং ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে এটি গাম্বো (gumbo) নামেও খ্যাত, যা এসেছে এর পর্তুগিজ নাম "quingombo," থেকে, যার আদি উৎস হলো পূর্ব আফ্রিকীয় শব্দ "quillobo,"

ঢেড়সের পুষ্টি উপাদান

ঢেঁড়স (Okra) Malvaceae গোত্রের সবজি (Abelmoschus eseulentus)। ঢেড়সে রয়েছে ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ ও লোহাসমৃদ্ধ।

প্রতি ১০০ গ্রাম ঢেঁড়সে ভক্ষণযোগ্য অংশে রয়েছে

  • আমিষ (১.৮ গ্রাম)
  • ভিটামিন-সি (১৮ মিলিগ্রাম)
  • খনিজ পদার্থ বিশেষ করে ক্যালশিয়াম (৯০ মিলিগ্রাম),
  • লোহা (১ মিলিগ্রাম) ও আয়োডিন রয়েছে।

এছাড়াও এতে রয়েছে ক্যারোটিন, ফলিক এসিড, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, অক্সালিক এসিড এবং অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিড। 

ঢেঁড়সের ব্যবহার

ঢেঁড়শের ফল সবজি হিসাবে রান্না করে খাওয়া হয়। কাঁচা অবস্থাতেই এই ফল গাছ থেকে ছাড়িয়ে নেয়া হয়। ঢেঁড়শ বিভিন্নভাবে খাওয়া যায় যেমন ভর্তা, ভাজি এবং তরকারি । বাঙালিদের মধ্যে ঢেঁড়স ভাজি খুব জনপ্রিয় একটি খাবার যা রুটির সাথে খেলে আরও মজাদার করে তোলে । তবে অল্প তেল এবং অল্প মসলায় রান্না করলে এর পুষ্টিগুণ  বজায় থাকে এবং দেহের জন্য ভাল পুষ্টি পাওয়া যায়।

ঢেঁড়সের উপকারিতা


বেশ কয়েকটি রোগে ঢেঁড়স খুবই উপকারী একটি সবজি। 

ক্যান্সার

ঢেঁড়সে রয়েছে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট  যা ক্যান্সার রোগ সৃষ্টিকারী কোষগুলোকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে এবং এই রোগ নিরাময়েও সাহায্য করে থাকে।

হাপানি

যাদের হাপানি আছে তাদের জন্য ঢেড়স খুবই উপকারি সবজি যা হাঁপানিতে খুব ভালো কাজ করে । এই হাপানি রোগটির হারবাল চিকিৎসায় ঔষুধ হিসেবে ঢেঁড়স ব্যবহার দেখা যায়।

কোলেস্টেরল 

ঢেঁড়সের মধ্যে রয়েছে সলিউবল ফাইবার (আঁশ) পেকটিন, যা রক্তের বাজে কোলেস্টেরলকে কমাতে সাহায্য করে এবং অ্যাথেরোসক্লোরোসিস প্রতিরোধ করে থাকে।

ওজন কমায়

ঢ্যাঁড়সে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। ঢেঁড়স দিয়ে ভাত খেলে দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভরা ভাব বজায় থাকে এবং ক্ষুধা লাগে কম। এটি হজমেও বেশ কার্যকরি ভূমিকা রাখে । তা ছাড়া এতে ক্যালরির পরিমাণ রয়েছে খুবই সামান্য। তাই যাঁরা দেহের ওজন কমিয়ে স্মার্ট হতে চান , তাঁদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ঢ্যাঁড়স খাওয়া বেশ উপকারি।

গর্ভাবস্থায় উপকারী

ঢ্যাঁড়সে থাকা ফলিক অ্যাসিড, যা গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুবই উপকারি। গর্ভাবস্থায় খাদ্যতালিকায় ফলিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ খাবার শিশুর নিউরাল টিউব ডিফেক্টস (এনটিডি) প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে। নিউরাল টিউব ডিফেক্টসের ফলে জন্মের সময়ে শিশুর মেরুদণ্ডের সমস্যা বা মস্তিষ্কের জটিলতা দেখা দেয়। তাই গর্ভাবস্থায় প্রতিদিনের খাদ্য তালিকাতে অবশ্যই ঢেড়স রাখুন।

রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়

ঢ্যাঁড়সের থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি–অক্সিড্যান্ট মানবদেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে থাকে। এ ছাড়া ঢেড়সে থাকা বিভিন্ন খনিজ যেমন ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি ও দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখে ।

চোখের যত্নে

দৃষ্টি ভালো রাখে ঢেঁড়সে আছে বেটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, লিউটিন; যা চোখের গ্লুকোমা, চোখের ছানি প্রতিরোধে সাহায্য করে। 

প্রতি একশ’ গ্রাম ঢেঁড়সে যা থাকে

শূন্য দশমিক শূন্য সাত মিলিগ্রাম থায়ামিন,
শূন্য দশমিক শূন্য ছয় মিলিগ্রাম নিয়াসিন ও
শূন্য দশমিক শূন্য এক মিলিগ্রাম রিবোফ্লাভিন রয়েছে।
  • অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় নিয়মিত ঢেঁড়স খেলে এর ফলেট উপাদানটি গর্ভের শিশুর সঠিক বিকাশে সাহায্য করে থাকে।
  • নিয়মিত ঢেঁড়স খেলে লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে সহজেই রক্তশূন্যতা দূর হয়। 
  • ডায়াবেটিস রোগীর স্নায়ুতন্ত্রে পুষ্টি সরবরাহ করে সতেজ রাখতে যাহায্য করে।
  • ঢেঁড়সে রয়েছে প্রচুর আঁশ যা কোষ্ঠ কাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে থাকে।
  • সহজে হজম হয় বলে বিপাকক্রিয়ায় সহায়তা করে এই ঢেড়স।

ঢেঁড়সের মধ্যে রয়েছে অনেক অনেক ঔষধি গুণ। এর মধ্যে রয়েছে সলিউবল ফাইবার পেকটিন, আঁশ, ভিটামিন এ, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এটি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়, শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধ করে। এ ছাড়া রয়েছে আরো অনেক গুণ।


ঢেড়সের অন্যান্য ব্যবহার

কাঁচা ঢেড়স প্রায় ৪৫০ গ্রাম পানিতে এমনভাবে সেদ্ধ করুন যাতে এক কাপ পরিমাণ অবশিষ্ট থাকে। এবার পানিটা ছেঁকে নিয়ে দুবার খাবেন একঘণ্টা পর পর। এতে প্রস্রাব-পায়খানা উভয়ই পরিষ্কার হবে। 

পৃথিবীর অনেক দেশে এটি সবজির পাশাপাশি ফল হিসেবে গ্রহণ করে। ভারতে গুড় তৈরিতে আখের রসের সঙ্গে ঢেঁড়সের শেকড় ও কা-ের ব্যবহার প্রচলিত আছে। তুরস্কে এর বীজ কফির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পাকার পর এর খোসা ও কা- কাগজ তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা যায়। পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা অনেক সময় যাদের হজমে সমস্যা তাদের এটি কম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।



চিত্রসূত্র - Photo by Quang Nguyen Vinh from Pexels



Post a Comment

0 Comments

Ads 4