Auto Ads 1

লিচুর উপকারিতা ও লিচুর পুষ্টি উপাদান এবং লিচু বেশি খাওয়ার অপকারিতা



ষড় ঋতুর এই লাল সবুজের দেশে বিভিন্ন মৌসুমে পাওয়া যায় নানান ধরনের পুষ্টিকর ফল। আর এইসকল ফল মানব শরীরের নানান পুষ্টিচাহিদা পূরণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমাদের শরীরের অনেক পুষ্টি চাহিদা মেটাই এই লিচু ।

পুষ্টিবিদ শওকত আরা সাঈদা লোপা লিচুর পুষ্টিগুণ এবং লিচু উপকারিতা সম্পর্কে জানিয়েছেন ।

লিচুর মূল উপাদানই হলো জলীয় অংশ , যা লিচুতে অনেক বেশি থাকে। আর প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট খুব অল্প পরিমাণে থাকে। ফ্যাট না থাকায় সবার জন্য বেশ উপকারি একটি ফল। কম ক্যালরি সম্পন্ন এই লিচু ফলটি সবাই খেতে পারে। তবে যাদের মিষ্টি খাওয়া বারন অর্থাৎ ডায়াবেটিস রোগী যারা তাদের জন্য এই ফল কিছুটা কম খাওয়াই ভালো।

লিচুতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিস-সি, ও ক্যালসিয়াম রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে অন্যান্য খনিজ উপাদান যেমন - আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের মতো উপাদানগুলো যা লিচুতে যথেষ্ট পরিমাণেই রয়েছে। 

লিচুতে থাকা নানান পুষ্টিউপাদান আমাদের শরীরের দৈনন্দিন পুষ্টিচাহিদা মেটাতে বেশ গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখে। শরিরের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে মৌসুমি ফলগুলো যতটা সম্ভব আমাদের জন্য খাওয়াটা খুবই উপকারি। তবে বেশি পরিমানে লিচু খেলে হিতে বিপরীত হতে পারে ।

লিচুর পুষ্টি উপাদান

  • কাঁচা লিচুর শাঁসে ৮২% পানি, ১৭% শর্করা, ১% আমিষ ও সামান্য স্নেহ থাকে।
  • কাঁচা লিচুর শাঁসে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে; প্রতি ১০০ গ্রামে ৭১ মি.গ্রাম যা প্রতিদিনের প্রয়োজনীয়তার ৮৬%। কিন্তু এছাড়া আর কোন পুষ্টি উপাদান উল্লেখযোগ্য পরিমাণে থাকে না।
  • ফাইটোকেমিক্যালস লিচুতে পরিমিত পরিমাণ পলিফেনল সহ ফ্ল্যাভান -৩-ওল এর মনোমার এবং ডাইমার থাকে যা পলিফেনলের পরিমাণের ৮৭%, এটি লিচু বাদামি হওয়া ও সংরক্ষণ এর সময় নিঃশেষিত হয়ে যায়।
  • লিচু প্রাকৃতিকভাবে বুটলেটেড হাইড্রোক্সিটলুইন (বিএইচটি) উৎপাদন করে। 
  • লিচুতে থাকা অ্যান্থোসায়ানিনের ৯২% হল সায়ানিডিন -৩-গ্লুকোসাইড।

লিচুর উপকারিতা 

লিচু মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে। আমাদের শরিরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হলে সব ধরনের ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যায়। এছাড়াও লিচুতে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলা দেহের রক্তের শ্রেতকণিকা বৃদ্ধিতে বেশ কার্য্যকরি ভূমিকা পালন করে।

লিচ মানব দেহের ব্লাড সার্কুলেশন বা রক্তের সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে বেশ উপাকার করে। রক্তের পরিসঞ্চালন বৃদ্ধি পাওয়ায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্য্যকরি ভূমিকা পালন করে।

দেহের ওজন

শরীরে ওজন কমাতে যথেষ্ট সাহায্য করে এই লিচু। লিচুতে খাদ্য-আঁশ থাকায় খাদ্যের পরিপাক এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে বেশ সহায়তা করে। এছাড়া্ব লিচুতে থাকা খাদ্য-আঁশগুলো শরিরের ভেতর থাকা টক্সিন বাইরে বের করতে সহায়তা করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ

লিচুর সবচেয়ে বড় গুন হচ্ছে- এটি ক্যানসার প্রতিরোধে করতে সহায়তা করে। লিচুতে থাকা ভিটামিন-সি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আমাদের শরীরে ক্যানসার প্রতিরোধে করতে বেশ কার্য্যকরি ভূমিকা রাখে। 

খাদ্য হজম

খাদ্য হজমে লিচু  সহায়তা করে। তবে পরিমাণে বেশি খেলে এটি আমাদের শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।  রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণেও লিচু বেশ ভালো ভূমিকা রাখে।


বেশি পরিমানে লিচু খেলে যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে


রক্তের গ্লুকোজ কমে যায়।

লিচু দেহের রক্তের গ্লুকোজ কমাতে সাহয্য করে। লিচু পরিমাণে বেশি খেলে তা হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে ।

যাদের ডায়াবেটিস আছে

যারা ওষুধের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন, তারা লিচু গ্রহণে কিছুটা সাবধান হওয়া উচিত।

যেহেতু ওষুধ রক্তে গ্লুকোজ কমাতে সাহায্য করে সেহেতু ওষুধের পাশাপাশি আবার যদি বেশি মাত্রায় লিচু খাওয়া হয় তাহলে হিতে বিপরিত বা বিপত্তি ঘটতে পারে ।

বাচ্চাদের লিচু খাওয়া


বেশিরভাগ ছোটো বাচ্চারাই লিচু খেতে ভালোবাসে কিন্তু এই লিচু খাওয়া যদি খালি পেটে খাওয়ানো হয় তাহলে পরিনাম হতে পারে ভয়াবহ । সুতরাং বাসি পেটে কখনই বাচ্চাদের লিচু খাওয়া উচিৎ হবেনা ।

রক্তচাপ পড়ে যাওয়া

বেশি পরিমানে লিচু খেলে দেহের রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

লক্ষন

শ্বাসকষ্ট হওয়া, বুক ধড়ফড় করা, মাতা ঘুরানো এবং বমি বমি ভাব হওয়ার মতো লক্ষনগুলো দেখা দিতে পারে ।

লিচু একটি গরম ফল

লিচু গরম ফল হওয়াই এই লিচু পরিমানে বেশি খেলে মানব দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রার ব্যালেন্স কমিয়ে দেই ফলে আমাদের গলা ব্যাথা হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে । সাথে মুখের ভিতরে ক্ষতও দেখা দিতে পারে এবং নাক দিয়ে রক্ত পড়ার মতোও সমস্যা হতে পারে । এই সমস্যাগুলো হওয়ার বিশেষ কারন হলো আমাদের দেশের বর্তমান আবহাওয়া ।

লিচু খেলে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যেতে পারে

লিচু নিয়মিত কয়েকদিন বেশি পরিমানে খেলে নানান রোগব্যাধি বেড়ে যেতে পারে। যেমন রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস, মাল্টিপল স্ক্লেরসিস, লুপাস ইত্যাদি রোগগুলো যাদের আছে তাদের জন্য বেশ ঝুকির কারন হতে পারে । অতিমাত্রায় ইমিউনিটি বেড়ে যাওয়ার ফলে এই সমস্যাগুলো দেখা দেই।

সার্জারির রোগীদের অতিরিক্ত লিচু খাওয়ার ঝুঁকি

যাদের রক্তচাপ বেশি তাদের যদি কোনো সমস্যার কারনে সার্জারির প্রয়োজন হয় তারা সার্জারির পুর্বে অন্তত দুই সপ্তাহ এবং সার্জারির পরের দুই সপ্তাহ লিচু খাওয়া থেকে বিরত থাকায় ভালো ।

অন্যন্য প্রয়োজনীয় উপাদানের ঘাটতি

লিচুতে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, জরুরি ফ্যাটি এসিড না থাকায়। লিচু বেশি পরিমাণে খেলে আমাদের শরীরের স্বাভাবিক ব্যালেন্স নষ্ট করে দিতে পারে। তাই সকলের উচিত এই লিচু ফলটি বেশি পরিমানে না খাওয়া । অর্থাৎ লিচু খেতে হবে পরিমিতভাবে।

তথ্যসূত্র - যুগান্তর  -  ডক্টর টিভি  এবং  উইকিপিডিয়া

Post a Comment

0 Comments

Ads 4