Auto Ads 1

কুল খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুন ও বরই পাতার গুনাগুন এবং ব্যবহারবিধি


সূচিপত্র

বাংলাদেশে বরই বা কুলের চাষ ও চাহীদা
বরই বা কুলের উপকারি গুণ সম্পর্কে জেনে নিন
পাকা কুল বা বরই খেলে হতে পারে ক্ষতি
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কুল খাওয়ার নিয়ম

কুল, বরই বা বড়ই বৈজ্ঞানিক নাম Ziziphus zizyphus। দক্ষিণ এশিয়ায় বহুল প্রচলিত, কন্টকপূর্ণ গাছের ফল। ইংরেজিতে একে সচরাচর Jujube বা Chinese date হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র, সর্বপ্রকার মাটিতেই বরই গাছ জন্মে। একটু ডিম্বাকৃতির বরইকে সচরাচর "কুল" বলে অভিহিত করা হয়। বরই গাছ ছোট থেকে মাঝারি আকারের ঝোপাল প্রকৃতির বৃক্ষ। বরই গাছের স্বাভাবিক উচ্চতা ১২-১৩ মিটার। এই গাছ পত্রঝরা স্বভাবী অর্থাৎ শীতকালে পাতা ঝরে, বসন্তে নতুন পাতা আসে। বরই গাছের ডাল-পালা ঊর্ধ্বমুখী। বৎসরের সেপ্টেম্বরে - অক্টোবরে মৌসুমে গাছে ফুল আসে। ফল ধরে শীতে। ফল গোলাকার, ছোট থেকে মাঝারি। ফল আকারে ছোট, কমবেশী ২.৫ সেন্টিমিটার। ফল পাকলে রঙ হলুদ থেকে লাল বর্ণ হয়। কাঁচা ও পাকা উভয় পদের বরই খাওয়া হয়। স্বাদ টক ও কাঁচামিঠা জাতীয়। বরই রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। পাকা বরই শুকিয়ে চাটনী প্রস্তুত করা হয়।

পশ্চিমবাংলা ভারতে একে "কুল" বলা হয়। এই কুলের সাথে হিন্দু সরস্বতী পূজার একটা সম্পর্ক রয়েছে। পশ্চিমবাংলার হিন্দুরা শ্রী শ্রী সরস্বতী পূজার আগে কুল খায় না। সরস্বতী পুজোর দিন মা সরস্বতীকে কুল নিবেদন করবার পরে কুল খাওয়া যায়। প্রতি স্কুলে মা সরস্বতীর পূজা হয়। সুতরাং কুলের সাথে সরস্বতী পুজোর একটা সম্পর্ক আছে, এমনকি জয়রামবাটিতে মা সারদা দেবীকে সরস্বতী পুজোর দিন দুপুর বেলা কুলের চাটনি অন্নভোগে দেওয়া রীতি।

ক্রান্তীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলে বরই বেশ জন্মে। এর আদি নিবাস আফ্রিকা হলেও বর্তমানে এটি বাংলাদেশ, ভারত, আফগানিস্তান, চীন, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় কিছু অঞ্চলে বিস্তার লাভ করেছে।

উত্তর ভারতের প্রতিটি বরই গাছে বছরে ৮০ থেকে ২০০ কেজি পর্যন্ত বরই ফলে। দশ থেকে বিশ বছর বয়সী গাছেই ফলন বেশি হয়। কুলে বিভিন্ন খনিজ দ্রব্য এবং ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ আছে।

বাংলাদেশে বরই বা কুলের চাষ ও চাহীদা 


বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে সব মাটিতেই এই কুল গাছে জন্ম হয় এবং ভালো বৃদ্ধি পাই। যত্নআত্তির বালাই ছাড়াই দিব্যি বেঁচে থাকে বছরের পর বছর। একসময় এই গাছটি অবহেলাতেই বেড়ে উঠত। এখন কিন্তু বরইয়ের সেই দিন নেই। বড় যত্ন করে চাষ করা হয়। ফলটি যেমন অর্থকরী, তেমনি পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ।

বাজারে এখন নানা রকম কুল বা বরই পাবেন। শীত থেকে গরমের শুরু অবধি সময়টা দেশি ফলের অভাব মেটায় প্রধানত দেশি টক বরই ও মিষ্টি কুল। বাজারে টক-মিষ্টি গোল বরই, নারকেল কুল, আপেল কুল, এমনকি স্বাদ মেটাতে আছে বাও কুল। দামও হাতের নাগালেই। পুষ্টিবিদেরা বলেন, কুলে আছে প্রচুর ভিটামিন আর খনিজ উপাদান।

বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায় সব ধরনের মাটিতে কুল জন্মে। এটি শুকিয়ে অনেক দিন সংরক্ষণ করা যায়। কাঁচা ও শুকনো কুল দিয়ে চমৎকার চাটনি ও আচার তৈরি করা যায়। পুষ্টিগুণের জন্য কুল তো খাবেনই; আরও একটা কারণে কুল খেতে পারেন। তা হলো এটি দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের পুষ্টিবিদ হাসিনা আকতারের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ১০০ গ্রাম কুলে রয়েছে খাদ্যশক্তি ৭৯ কিলোক্যালরি, শর্করা ২০ দশমিক ২৩ গ্রাম, আমিষ ১ দশমিক ২ গ্রাম, জলীয় অংশ ৭৭ দশমিক ৮৬ গ্রাম, ভিটামিন এ ৪০ আইইএ, থায়ামিন শূন্য দশমিক শূন্য ২ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লোবিন শূন্য দশমিক শূন্য ৪ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন শূন্য দশমিক ৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি ৬ শূন্য দশমিক শূন্য ৮১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৬৯ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ২১ মিলিগ্রাম, লোহা শূন্য দশমিক ৪৮ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ১০ মিলিগ্রাম, ম্যাংগানিজ শূন্য দশমিক শূন্য ৮৪ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২৩ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ২৫০ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৩ মিলিগ্রাম, জিংক শূন্য দশমিক শূন্য ৫ মিলিগ্রাম।

বারডেম জেনারেল হাসপাতালের পুষ্টিবিদ শামছুন্নাহার নাহিদের তথ্য অনুযায়ী, বরইয়ে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামসহ আছে নানা উপাদান। এগুলো রোগ প্রতিরোধে যেমন ভূমিকা রাখে, অন্যদিকে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়।

দেশি ফলের মধ্যে বরই বেশ জনপ্রিয়। কাঁচা অথবা আচার বানিয়ে খাওয়া যায় বরই। টক-মিষ্টি এই ফলটির রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। পুষ্টিগুণ ছাড়াও বরইয়ের রয়েছে অনেক রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা। চলুন জেনে নিই বরইয়ের উপকারিতা-
 

বরই বা কুলের উপকারি গুণ সম্পর্কে জেনে নিন


ক্যান্সার প্রতিরোধ

বরই এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান বিদ্যমান, যারা টিউমারের উপর সাইটোটক্সিক প্রভাব বিস্তার করে। যার ফলে শরীরে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

রক্ত পরিশুদ্ধি

কুল অত্যন্ত চমৎকার একটি রক্ত বিশুদ্ধকারক। শুকনো বরই এর মধ্যে স্যাপোনিন, অ্যাল্কালয়েড এবং ট্রাইটারপেনয়েড উপাদান থাকে যারা রক্ত পরিশুদ্ধ করে এবং হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য টক বরই উপকারী ফল। ডায়রিয়া, ক্রমাগত মোটা হয়ে যাওয়া, রক্তশূন্যতা, ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদি রোগ নিরাময়ে কাজ দেয় এই ফল।

দুশ্চিন্তা

অবসাদ এবং দুশ্চিন্তা দুর করে। কুলের উপাদানগুলো শরীরে শক্তি জোগায়। অবসাদ কেটে যায় দ্রুত। তাই যাঁরা অবসাদে ভুগছেন, তাঁরা বরই খেতে পারেন।

ত্বকের যত্নে বড়ই


ত্বকের রুক্ষতা দূর করে ত্বককে কোমল করে বরই। রোদে পোড়া ত্বক সুরক্ষার কাজেও কার্যকর। বরই বুড়িয়ে যাওয়া ঠেকায়। বরই বয়সের ছাপ পড়তে বাধা দেয় শরীরে।

ইনসোমনিয়া বা অনিদ্রা

ইনসোমনিয়া এবং দুশ্চিন্তা অনেক মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায়। বরই এর শক্তিশালী কেমিক্যালগুলো অনিদ্রা এবং দুশ্চিন্তা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।

লিভারের সুরক্ষা

শরীরের ফ্রি র‍্যাডিকেলগুলো লিভারের ক্ষতি করে। বরই এর মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি লিভারকে সুরক্ষা প্রদান করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ

বরইতে ফ্যাট নাই বললেই চলে। ২ আউন্স (প্রায় ৪টি) বরই খেলে শরীরে ৪৪ ক্যালরি শক্তি যোগান দেয়, কিন্তু ফ্যাট প্রায় শূন্য। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণেও এরা সাহায্য করতে পারে।

হাড় মজবুত করে

এই ফলে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ইত্যাদি সহ আরো অনেক ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায় যা হাড় শক্ত ও মজবুত করতে সাহায্য করে।

রক্ত সঞ্চালন

আয়রন ও ফসফরাস শরীরে রক্ত উৎপাদন এবং রক্ত সঞ্চালনের প্রক্রিয়া বৃদ্ধি করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা

এর ভেতরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ফ্রি র‍্যাডিকেলগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এছাড়াও এর মধ্যে ভিটামিন সি, এ, বি২, ফাইটোকেমিক্যাল ইত্যাদি পাওয়া যায় যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

মৌসুমি জ্বর, সর্দি-কাশিও প্রতিরোধ করে কুল। এ ছাড়া হজমশক্তি বৃদ্ধি ও খাবারে রুচি বাড়িয়ে তোলে এ ফল।

কুলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। ফলে এটি সংক্রামক রোগ দূর করতে সহায়তা করে। যেমন: টনসিলাইটিস, ঠোঁটের কোণে ঘা, জিহ্বায় ঘা, ঠোঁটের চামড়া উঠে যাওয়া ইত্যাদি দূর করে।

বরই কোষ্ঠকাঠিন্যসহ অন্যান্য হজমজনিত সমস্যার সমাধান করে। ক্ষুধাবর্ধক হিসেবে কাজ করে।  

পাকা কুল বা বরই খেলে হতে পারে ক্ষতি


বরই সবার জন্য ভালো হলেও ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য কিন্তু নয়। পাকা বরইয়ে চিনি থাকে, তাই ডায়াবেটিসের রোগীদের পাকা বরই সাবধানে খাওয়াই ভালো। আর যাঁদের শ্বাসকষ্ট আছে, কাঁচা বরই বেশি খেয়ে ফেললে তাঁদের এ সমস্যা কিন্তু বেড়ে যেতে পারে।

এছাড়াও বিভিন্ন দেশে পেটের সমস্যা দূর করতে, মাংসপেশি শক্তিশালী করতে এই ফলের ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

আরও জানুন এবং শেয়ার করে নিজের ফেসবুক ওয়ালে রাখুন যেনো আপনার আপন জনেরাও উপকৃত হয় 



বরই পাতার গুনাগুন ও ব্যবহারবিধি


মৃতব্যক্তিকে গোসল দেয়া ফরজে কেফায়া। অনেকে গোসল দেয়াকে ওয়াজিব বলেছেন। তবে মানুষ মারা গেলে তাকে সঠিকভাবে গোসল দেয়া উত্তম। এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো কুল বা বরই পাতা মেশানো হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল দেয়া। কিন্তু মৃতব্যক্তিকে বরই পাতা মেশানো পানিতে গোসল দেয়ার কারণ কী?

মানুষ মারা গেলে বরই পাতা মেশানো পানি দিয়ে গোসল করানো হয়। কিন্তু কেন বরই পাতা মেশানো পানি দিয়ে গোসল করানো হয়, এ বিষয়টি অনেকেই জানে না। মৃতব্যক্তিকে বরই পাতা মেশানো পানি দিয়ে গোসল দেয়ার কথা বলেছেন বিশ্বনবি। হাদিসে এসেছে-
> হজরত ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেন, ‘এক ব্যক্তি আরাফাতে অবস্থানের সময় তার উটনী থেকে পড়ে যায়। এতে তার ঘাড় মটকে যায় (এতে সে মারা যায়)। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাকে বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল করাও এবং দুই কাপড়ে তাকে কাফন দাও। তাকে সুগন্ধি লাগাবে না এবং তার মাথা ঢাকবে না। কেননা কেয়ামতের দিন সে তালবিয়া পাঠ করতে করতে ওঠবে।’ (বুখারি)

তথ্যসূত্র - উইকিপিডিয়া   -   প্রথমালো  -  সময় নিউজ

Post a Comment

0 Comments

Ads 4