তেল এমন এক বস্তু যা সাধারণ তাপমাত্রায় তরল অবস্থায় থাকে। এই তেল পানির সাথে মেশে না; অথচ জৈব দ্রাবকের সাথে সহজেই মিশে যায়। তেলে রয়েছে উচ্চমাত্রার কার্বন এবং হাইড্রোজেন। বিভিন্ন প্রকারের তেল, যেমন: উদ্ভিজ্জতেল, ঔষধি তেল এবং অপরিহার্য উদ্বায়ী তেল প্রদত্ত সাধারণ সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত। সবধরনের তেলই আদিতে জৈব পদার্থ থেকে উৎসরিত।
তেলের নামকরণ
বাংলায় তেল শব্দটি এসেছে তৈল থেকে। তেলের ইংরেজি নাম Oil । এই নামের ব্যবহার প্রথম লক্ষ্য করা যায় ১১৭৬ সালে যা পুরাতন ফরাসি শব্দ oile থেকে আসে। oile এসেছে লাতিন oleum থেকে। অলিয়াম এসেছে গ্রীক ἔλαιον (এলায়ন) থেকে যার অর্থ জলপাই তেল আর এলাইয়া অর্থ জলপাই গাছ বা ফল।
তেলের প্রকারভেদ
- খনিজ তেল
- জৈব তেল
- সিনথেটিক তেল
খনিজ তেল
এই খনিজতেল ভূ-অভ্যন্তরের সচ্ছিদ্র পাথরের স্তর থেকে পাওয়া যায়। এই খনিজতেল বিভিন্ন জৈব পদার্থ, যেমন আদিকালে সমুদ্র তলদেশে জমে থাকা মৃত প্লাংকটন, থেকে উৎপন্ন হয়েছে।
মানবজাতির উদ্ভবেরও বহুকাল আগে থেকেই এই তেল সৃষ্টি হয়েছে এবং ভূগর্ভের বিভিন্ন স্থান যেমন: পাথরের স্তর, বালুর স্তর বা ফাপা স্থান থেকে এই তেল আহরন বা আহরিত করা হয় ।
এই পৃথিবীতে অনেক ধরনের তৈলাক্ত পদার্থ প্রকৃতি থেকেই পাওয়া যায়, নানান ধরনের তেলের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হল পীচ। এই পিচ স্বাভাবিক ভাবেই মাটির নিচে বা আলকাতরার যে খনি রয়েছে সেই খনির যেখানে ফাটল আছে সেখানে পাওয়া যায়।
জৈব তেল
জৈব তেল গুলি উদ্ভিদ, প্রাণী এবং অন্যান্য জীব থেকে জৈবিক প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়ে থাকে এবং এসব তেলের প্রকারভেদ রয়েছে অনেক।
সিনথেটিক তেল
সিথথেটিক তেল একধরনের পিচ্ছিলকারক যা কৃত্রিমভাবে পেট্রোলিয়াম নয় এমন ধরনের রাসায়নিক যৌগ দ্বারা প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। যা সিনথেটিক তেল পেট্রোলিয়াম থেকে পরিশোধিত পিচ্ছিলকারকের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়। কারণ এতে খনিজ তেল থেকেও ভালমানের যান্ত্রিক এবং রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় ।
তেল খাওয়ার অপকারিতা
কোলেস্টেরল
প্রাণীজ তেলে থাকা স্যাচুরেটেড ফ্যাট খুব সহজে রক্তে এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং এই চর্বি সহজে শরীর থেকে বেরোতে পারে না। ফলে হৃদরোগ, রক্তচাপ, ডায়বেটিস ও স্থূলতার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ভাজা পোড়া- বর্তমান আমাদের দেশে গ্রামে এবং শহরে দুখানেই রাস্তাঘাটে প্রচুর পরিমানে ভাজা-পোড়া বিক্রি হয়ে থাকে এই ভাজা-পোড়া আমাদের শরিরে অনেক ক্ষতি করে। ডুবো তেলে ভাজা ফাস্ট ফুড খাবার খাওয়ার প্রবণতাও রয়েছে অনেক বেশি। আর এই খাবারগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে স্যাচ্যুরেটেড ফ্যাট।
পুষ্টিবিদরা বলছেন, যেসব তেলে স্যাচ্যুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা বেশি থাকে, সেগুলো খেলে শরিরে নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে তাই এইসকল খাবার পরিহার করা উচিৎ।
ট্রান্স ফ্যাট
উদ্ভিজ্জ তেলে বা ডুবো তেলে ভেজে যে সকল খাবার খাওয়া হয় কিংবা একই তেল বার বার ব্যবহার করে বিভিন্ন খাবার রান্না করা হয়। তাহলেও সেই ভেজিটেবল তেল ভেঙ্গে ট্রান্স ফ্যাটে রূপ নেয়, যা শরীরের জন্য খুবই মারাত্ত্বক ক্ষতি করে থাকে।
কায়িক পরিশ্রম
যারা শহরের বাস করেন, তারা বেশিরভাগ কায়িক পরিশ্রম কম করে থাকেন, বা স্থূলতায় ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে তেল বেশি খেলে মানব শরিরে খারাপ প্রভাব ফেলে।
যারা উচ্চ রক্তচাপে,স্থূলতা, হৃদরোগে ভুগছেন তারা সবধরনেরই তেল কম পরিমানে খাওয়া উচিৎ ।
ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষকদের তথ্য মতে, প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষদের ৩০ গ্রাম এবং প্রাপ্ত বয়স্ক নারীদের ২০ গ্রামের বেশি স্যাচুরেটেড ফ্যাট খাওয়া ঠিক মোটেও ঠিক নয়।
শিশুদের ক্ষেত্রে এই হার আরও কম খাওয়া অবশ্যই উচিৎ ।
৫ গ্রামের নীচে ট্রান্স ফ্যাট খাওয়ার মাত্রাও নামিয়ে আনতে বলেছেন এই বিশেষজ্ঞগন
তেল খাওয়ার উপকারিতা
তেল বা চর্বি হলো খাদ্যের ছয়টি উপাদানের মধ্যে একটি উপাদান। অতিরিক্ত তেল বা চর্বি আমাদের শরিরের জন্য যেমন খারাপ তেমনি আবার আমাদের দেহে তেলের প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে অনেক।
অনেকেই আছেন তেল বা চর্বির খারাপ দিকগুলো থেকে রক্ষা পেতে দৈনন্দিন খাবারে একদমই তেল খান না অর্থাৎ রান্নায় একদমই তেল ব্যবহার করেন না ।
খাবার তেলে রয়েছে মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালোরি, ও ভিটামিন - যা মানব শরীরের নানা ধরনের পুষ্টি স্বল্পতা পূরণ করতে সাহায্য করে থাকে।
ভিটামিন শোষণ
মানব দেহের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন 'এ' 'ই' 'কে' 'ডি' ফ্যাট । আর এই ভিটামিনগুলো লিভারে শোষণ হতে তেলের প্রয়োজন পড়ে।
মানব শরিরের বিভিন্ন পুষ্টিগুন পেতে দৈনন্দিন রান্নাতে যে সকল শাকসবজি ও অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার রান্না করা হয় তাতে অবশ্যয় তেল দিয়ে রান্না করা উচিৎ ।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট
তেলে থাকা ভিটামিন-ই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বক, হাড়, দাঁত ও চোখের জন্য অনেক উপকারি ।
প্রোটিন
মানব দেহে যে হরমোন রয়েছে সেই হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করতে তেলের প্রয়োজন হয়ে থাকে ।এবং তেলের প্রোটিন মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
ক্যালোরি
আমরা প্রতিদিন যে খাবার গ্রহন করে থাকি , সেই সকল খাবারে মধ্যে তেলে সবচেয়ে উচ্চহারে ক্যালোরি পাওয়া যায় আর এটাই মানব দেহে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে।
প্রতি এক গ্রাম তেল থেকে ৯ কিলোক্যালোরি শক্তি পাওয়া যায় যেখানে অন্যান্য আমিষ ও শর্করা থেকে পাওয়া যায় চার কিলোক্যালোরি।
ফ্যাটি অ্যাসিড
উদ্ভিজ্জ তেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি অ্যাসিড, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে, ত্বক ভালো রাখে, চর্মরোগ দূর করে ।
তেলের ব্যবহার বিধী
তেল বিভিন্ন উদ্যেশ্যে ব্যবহার করা হয়ে থাকে -
- মাথার চুলের যত্ন নিতে
- ভোজ্য তেল
- জ্বালানি হিসেবে
- বিদ্যুত উৎপাদন খাতে
- পিচ্ছিলকারক (তৈলাক্তকরণ)
- চিত্রকর্ম অঙ্কনে
- প্রোটো কেমিক্যাল
পরিশেষেঃ
তবুও বলতে হয় খাবার সু-স্বাদু করতে অনেক সময় বেশি তেল না দিলে যেনো খাবার খাওয়াই পরিপুর্নতাই আসেনা ।
তাই শরিরে অন্য কোনো অসুখ না থাকলে অতিরিক্ত তেল ও মসলা দেওয়া খাবার মাঝেমধ্যে খেতে পারেন। তবে খুবই অল্প পরিমাণে।
0 Comments