Auto Ads 1

ছোটো মাছ খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টি উপাদান


মাছ একটি শীতল রক্তবিশিষ্ট মেরুদণ্ডী প্রাণী যার শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ফুলকা রয়েছে, চলাচলের জন্য রয়েছে যুগ্ম অথবা অযুগ্ম পাখনা ,এদের দেহে সচরাচর আঁইশ থাকে, সাধারণত এরা পানিতেই বসবাস করে থাকে। 

সাধারণত এদের দেহের বহির্ভাগ আঁশ দ্বারা আচ্ছাদিত; তবে আঁশ নেই এমন মাছের সংখ্যাও একেবারে কম নয়। এরা সমুদ্রের লোনা জল এবং স্বাদু জলের নদী, হ্রদ, হাওর, বাওর, খাল, বিল, পুকুর, ডোবায় বসবাস করে থাকে। এরা পাহাড়ি ঝর্ণা থেকে শুরু করে মহাসাগরের গহীন অতল স্থানে বাস করে। অর্থাৎ যেখানেই পানি রয়েছে সেখানেই মাছের চাষ বা মাছের অস্তিত্ব পাওয়া যেতে পারে।

পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই মাছ মানুষের পুষ্টিগুন সম্পন্য খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত থাকে। মাছে রয়েছে প্রচুর পারিমানে  আমিষ যা মানবদেহে অন্যতম আমিষ যোগানদাতা।

ছোটো মাছের পুষ্টি উপাদান

ছোট মাছে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম। ছোট মাছে রয়েছে ক্যালসিয়ামের এক অনন্য উপাদান। ছোট পুঁটি, ছোট চিংড়ি, স্বরপুঁটি,  কাঁচকি, কৈ, শিং, বাঁশপাতা, পাতাশি, মাগুর, মলা, ঢেলা, চাঁদা, মৌরলা, কাজলি, পিউলি,  ইত্যাদি জাতীয় মাছে আছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ‘এ’ ক্যালসিয়াম এবং, প্রোটিন । 

মানবদেহে দৈনন্দিন ক্যালসিয়ামের চাহিদা পুরনে ছোটো মাছ বেশ বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে বাড়ন্ত শিশু, গর্ভবতী মা এবং প্রসূতি মায়েদের ক্যালসিয়ামের চাহিদা থাকে অনেক গুনে বেশি। বাচ্চাদের হাড় ও দাঁত গঠনে ক্যালসিয়াম অত্যন্ত দরকারি একটি উপাদান। তাই মানব দেহের উপকারের জন্যেই দৈনন্দিন আমাদের খাবারের তালকাতে ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ ছোট মাছ রাখা  উচিত।

পুষ্টি উপাদান সমূহ নিম্নরূপ

  • কার্বোহাইড্রেট -  ৩.১ গ্রাম  
  • ভিটামিন-সি -  ১৫ মিলিগ্রাম  
  • লৌহ বা আয়রন -  ১.০ মিলিগ্রাম  
  • এনার্জি -  ১০৬ কিলোক্যালরি
  • জলীয় অংশ -  ৭৫.০ গ্রাম 
  • খনিজ পদার্থ -  ১.৪ গ্রাম  
  • ক্যালসিয়াম -  ১১০ মিলিগ্রাম  
  • প্রোটিন/আমিষ -  ১৮.১ গ্রাম  
  • চর্বি/ফ্যাট -  ২.৪ গ্রাম  

আরও জানুন 👇

ছোটো মাছের উপকারিতা

চোখের যত্নে  ছোটো মাছ

ছোট মাছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ থাকায়, রাতকানা, অন্ধ হয়ে যাওয়া ছাড়াও দৈনন্দিন অনেক শারিরীক সমস্যা দূর করতে ছোটো মাছ খবই উপকারি। শিশুদের রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করতে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ ছোটো মাছ, মলা, চাঁদা, ঢেলা ও গুঁড়া মাছ খাওয়ানো উচিত। দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে মানবদেহের জন্যও গুঁড়া মাছ খুবই প্রয়োজন।

ডায়াবেটিস

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খনিজ লবণ সমৃদ্ধ গুঁড়া মাছ উপকারী। হৃদরোগী, স্ট্রোকের রোগীর ও গর্ভবতী মা ও দুগ্ধদানকারী মায়ের জন্য গুঁড়া মাছ খুবই উপকারী ।

উচ্চ রক্তচাপ

যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে তারা ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ গুঁড়া মাছ খেতে পারেন যা ব্ল্যাডপ্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে ।


কয়েকটি ছোট মাছের পুষ্টি গুনাগুন

পুঁটি মাছ

প্রতি ১০০ গ্রাম পুঁটি মাছে আছে ১০৬ ক্যালরি শক্তি। এর ১৮.১ গ্রাম প্রোটিন, ২.৪ গ্রাম চর্বি, ১১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। দাঁত ও হাড়ের গঠনে এটি সাহায্য করে। 

মলা মাছ

রাতকানা রোগ, ভিটামিন ‘এ’-র স্বল্পতাজনিত চোখের সমস্যা রোধে মলা মাছ খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখে। মলা মাছে রয়েছে ক্যালসিয়াম অনেক বেশি। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে এই মাছে, যা হৃদ্‌রোগীদের জন্য অনেক উপকারি। 

প্রতি ১০০ গ্রাম মলা মাছে রয়েছে
  • ক্যালসিয়াম-  ৮৫৩ মিলিগ্রাম ।
  • আয়রন ৫.৭ মিলিগ্রাম ,
  • ভিটামিন ‘এ’ - ২০০০ ইউনিট ,
  •  জিংক - ৩.২ মিলিগ্রাম ।

ট্যাংরা মাছ

১০০ গ্রাম ট্যাংরা মাছে ১৪৪ ক্যালরি শক্তি মিলবে। এতে প্রোটিন ১৯.২ গ্রাম, চর্বি ৬.৫ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৭০ মিলিগ্রাম। আয়রন আছে ২ মিলিগ্রাম। রক্তশূন্যতার রোগীদের ট্যাংরা মাছ খাওয়া উচিত।

কাচকি মাছ

প্রতি ১০০ গ্রাম কাচকি মাছে রয়েছে

প্রোটিন - ১২.৭ গ্রাম  
চর্বি ৩.৬ গ্রাম , 
ক্যালসিয়াম - ৪৭৬ মিলিগ্রাম , 
আয়রন - ২.৮ মিলিগ্রাম ।

এই কাচকি মাছ কোটাকুটির কোনো ঝামেলা নেই, বাজার থেকে কিনে এনে ধুয়ে বেছে রান্না করে খাওয়া যায়। 

ছোটো মাছ খাওয়ার কিছু সতর্কতা

জীবানু
ছোট মাছে প্রোটিন ও জলীয় অংশ বেশি থাকায় এই মাছ গুলো দ্রুত জীবাণুতে আক্রান্ত হওয়ার । তাই এসকল ছোটো মাছ গুলো কেনার পর দ্রুত রান্না করে ফেলায় ভালো। 

খাদ্যগুন নষ্ট হয়
অনেক সময় আমরা ছোটো মাছ গুলো ফ্রিজে রেখে দিই তাই রান্না করার জন্য যখন ফ্রিজ থেকে বের করবেন তখন দীর্ঘ সময় বাইরে না রেখে দ্রুত রান্না করে ফেলায় ভালো। ছোটো মাছগুলো কম তাপে রান্না করায় ভাল। ভাপে করতে পারলে আরও ভালো। ছোটো মাছ গুলো বাজার থেকে আনার পর পরিস্কার করে ধুয়ে  বাইরে অনেকক্ষণ রেখে দিলে অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে খাদ্যগুণ কিছুটা নষ্ট হয়ে যায়। আবার অনেকে ছোটো মাছ রান্না করার সময় সেদ্ধ করে ওই পানি ফেলে দিয়ে থাকে ,এই পানি ফেলে দেওয়া ভালো নয়। 

বাতের ব্যথা
ছোট মাছে ইউরিক অ্যাসিড বেশি থকায় যাদের গেঁটে বাতের ব্যথা আছে ওইসকল রোগীদের ছোটো মাছ কম খাওয়া উচিত।

কিডনি
ছোটো মাছে ফসফরাস থাকে অনেকগুনে বেশি আর এই ফসফরাসযুক্ত খাবার বেশি খেলে কিডনি রোগিদের জন্য ক্ষতি হতে পারে । তাই কিডনি রোগীদেরও এই খাবারটি কম খাওয়া উচিত।


তথ্যসূত্র - প্রথম আলো - উইকিপিডিয়া

চিত্রসূত্র - Photo by Oziel Gómez from Pexels


Post a Comment

0 Comments

Ads 4