Auto Ads 1

ঝাল খাওয়ার উপকারিতা ও ঝাল বেশি খেলে কি হয়

পেটের ক্ষুধা মেটাতে ঝাল মরিচের প্রয়োজন না থাকলেও মনের ক্ষুধা মেটাতে ঝাল মরিচের ভূমিকা রয়েছে অপরিসীম। জাতিগতভাবেই আমাদের ঝাল খাবার খুব পছন্দ। ঝাল মরিচের এই ভালোবাসা কখনো প্রকাশ পায় স্বাদের ভর্তার সঙ্গে, আবার সকালের পান্তাই কখোনোবা গল্পে গল্পে খাওয়া ঝালমুড়ির সঙ্গে।

ঝাল কোনো স্বাদ নয়। ঝাল আসলে  এক ধরনের অনুভূতি। কি অবাক হচ্ছেন? অবাক হওয়ার কিছু নেই আপনিই বলুন , আপনি যখন রান্নায় ব্যবহিত অন্যকোনো মসলা অথবা লবন কিংবা টক জাতীয় কিছু হাতে নেই তখন কি আপনার হাত জ্বলে ? কিন্তু এই ঝাল মরিচ হাতে ঘষলে কেমন লাগে ?

আমাদের জিব যে পাঁচটি স্বাদ বুঝতে পারে, তার মধ্যে ঝাল নেই। আমাদের জিবে প্রায় ১০ হাজার স্বাদগ্রন্থি এবং ধারক কোষ রয়েছে, যা আমাদের জিবকে পাঁচ ধরনের স্বাদ বুঝতে সাহায্য করে। জিবের ডগা বা অগ্রভাগে মিষ্টি এবং পশ্চাদ্‌ভাগে তিক্ত বা তেতো স্বাদগ্রাহক থাকে, অগ্রভাগের কিছু পরে এবং মাঝখানে লবণাক্ত বা নোনতা, দুই পাশে টক ও উমামি স্বাদ গ্রহণের জন্য একটি করে অংশ রয়েছে। উমামি হচ্ছে ক্ষুধাবর্ধক স্বাদ এবং একে সুগন্ধি বা মাংসের গন্ধযুক্ত স্বাদ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এই স্বাদ পনির ও সয়া সসে পাওয়া যায়।

ঝাল আসলে কোনো স্বাদ নয়। এটা একধরনের অনুভূতি। এই অনুভূতি তৈরি হয় একধরনের জ্বালাপোড়া ও উষ্ণতা থেকে। বলেছেন এভার কেয়ার হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী ।

বিভিন্ন মরিচের মধ্যে ক্যাপসিসিন নামের রাসায়নিক উপাদান থাকে। এই উপাদানটি ঝাল ছাড়া আর কোনো উদ্ভিদে পাওয়া যায় না। ক্যাপসিসিনসমৃদ্ধ রাসায়নিক উপাদানযুক্ত খাবার খাওয়ার পর তা জিবের স্বাদগ্রন্থিগুলোর সঙ্গে মিশে মুখের ভেতর একধরনের জ্বালাপোড়া ও উষ্ণতা তৈরি করে, যা আমাদের ঝালের অনুভূতি বুঝতে সাহায্য করে।

অল্প কিংবা বেশি যাইহোক ঝাল খাওয়ার জন্য অভ্যাসের প্রয়োজন হয়। সবাই একই ধরনের ঝাল খেতে পারেন না। ঝাল যদি স্বাদ হতো, তাহলে সবার জন্য সমান হতো। যেহেতু ঝাল স্বাদ নয়, সেহেতু অল্পতেই কারও ঝাল কম বা বেশি অনুভূত হয়। পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী আরও বলেন, ভিটামিন সি পাওয়ার সবচেয়ে সহজলভ্য উপায় হচ্ছে কাঁচা মরিচ। কাঁচা মরিচে ভিটামিন সির পরিমাণ কমলার চেয়ে বেশি থাকে। কাঁচা মরিচ রান্না করে না খেয়ে কাঁচা খেলে ভিটামিন সির পাশাপাশি আরও অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায় ।

ঝাল খাওয়ার উপকারিতা 

গবেষকরা বলছেন, ক্যাপসেইসিন সমৃদ্ধ খাবার খাদ্যরসিক মানুষদের ক্ষুধা নিবারন করে চিকন থাকতে সহায়তা করে, ক্যালরি দহনের সক্ষমতা বাড়ায়, ব্যাথা কমায়, সাইনাস পরিষ্কার করে, কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়ার উৎপাদন দমন করে। 

অনেকেই আছে ঝাল খেতে ভয় পেয়ে থাকেন। তবে ঝাল খাওয়ার মধ্যেও রয়েছে কিছু মূল্যবান স্বাস্থ্য উপকারিতা। চলুন দেখে নেয়া যাক ঝাল খেলে কি কি উপকার হয়।

গবেষণায় দেখা যায় মরিচ ও ঝাল খাবারের যৌগ ক্যাপসিসিনের রয়েছে দেহের ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করার জাদুকরী ক্ষমতা। এছাড়াও এর আরও রয়েছে সাধারণ সর্দি কাশি ও স্ট্রোক প্রতিরোধের ক্ষমতা।

ওজন কমাতে
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখুন একটু বেশি ঝাল খাবার। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে মরিচ যা ঝাল খাবারের মূল উৎস তাতে রয়েছে ক্যাপসিসিন নামক যৌগ যা দেহে থার্মোজেনিক ইফেক্টের জন্য দায়ী। এই থার্মোজেনিক ইফেক্ট দেহের ক্যালরি ক্ষয় করতে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে।

রাগ নিয়ন্ত্রণে
গবেষণায় দেখা গেছে ঝাল খাবার আমাদের দেহে সেরেটেনিনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে থাকে। যাতে একধরনের ভালোলাগা উৎপন্ন হয় আমাদের মস্তিষ্কে। যারা একেবারেই রাগ নিয়ন্ত্রণ  করতে পারেননা তারা ঝাল খাবার খেয়ে রাগ দূর করার চেষ্টা করতে পারেন।  এতে করে রাগও দূর হয়ে যায় খানিক পরেই।

হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে
ঝাল খাবার কার্ডিওভ্যস্কুলার সমস্যা দূরে রাখতে সহায়তা করে। ঝাল খাবার দেহের খারাপ কলেস্টোরল দূর করতে সহায়তা করে, এতে করে হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকে। এছাড়াও ক্যাপসিসিনের রয়েছে অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা প্রদাহ বন্ধ করতেও সহায়তা করে।

ডায়াবেটিস
ঝালে ক্যাপসেইসিন রয়েছে যা ডায়াবেটিসের রোগীদের রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে ক্যাপসেইসিনের ভূমিকা অপরিসীম। 

গবেষণায় দেখা যায় ঝাল খাবার এবং ঝাল মরিচ রক্তের শিরা উপশিরাকে নমনীয় করতে সহায়তা করে এবং উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রন রাখতে সহাওয়তা করে ।

আরও জানুন 👇

ডিমের পুষ্টিগুন ও ডিমের উপকারিতা এবং ডিম খাওয়ার সঠিক নিয়ম
জাম খাওয়ার উপকারিতা ও জামের পুষ্টি উপাদান
আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং পুষ্টি উপাদান
কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা । ঘরে বসেই কিসমিস তৈরির নিয়ম
তেলের উৎপন্ন ও প্রকারভেদ এবং তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা ?
দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা । পুষ্টি উপাদান এবং দুধ খাওয়ার দোয়া

কোন ধরণের ঝাল বেশি উপকারি

শুকনো বা গুঁড়া মরিচের তুলনায় কাঁচা মরিচে ক্যাপসেইসিনের পরিমাণ বেশি। কাঁচা মরিচে ভিটামিন সি অনেক। তাই রান্নায় বা সালাদে কাঁচা মরিচ থাকলে ভালো। 

আবার দেখা গেছে, সবুজ কাঁচা মরিচের চেয়ে লাল রঙের তাজা কাঁচা মরিচ আরও ভালো। এই গুণ পাওয়া যাবে ক্যাপসিকামেও।  তাই ঝাল মানেই খারাপ, এ ধারণা ভুল। তেলবিহীন বা ভাজাপোড়া ছাড়া খাবার যেমন চটপটি, কাঁচা ছোলা, সালাদ, ফল ইত্যাদিতে কাঁচা মরিচের টুকরা দিয়ে খাওয়া হৃদ্‌রোগীদের জন্য বেশ ভালো একটি নাশতা। ( প্রথম আলো )

ঝাল বেশি খেলে কি হয়

যখন আমরা ঝাল খাই, আমাদের ব্রেণ তখন ব্যাথা সংকেত গ্রহন করে। ফলে পাকস্থলি বিপর্যস্ত হয়ে বমি বমি ভাব অথবা বমি হয়। পাকস্থলি বিষ গ্রহণের মতো প্রতিক্রিয়া দেয় এবং ঝাল জাতীয় যে খাবার খাওয়া হয়েছে সেটি বের করে দেয়ার প্রচেষ্টা চালায়। যদি বমি হয়ে যায়, তাহলে যে অ্যাসিড পাকস্থলি থেকে বের হয়ে আসে সেটি অন্ননালীতে বিরক্তির সৃষ্টি করে।

২০১৬ সালে মরিচ খাওয়ার প্রতিযোগিতায় অতিরিক্ত মরিচ খাওয়ার কারণে অন্ননালী পুড়ে একজন মারা যান।

অনেকেরই পছন্দের প্রথম তালিকার রয়েছে ঝাল জাতীয় খাবার। বাঙালির প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ঝাল খাবার না হলে যেনো চলেই না। কেউ কেউ আবার একটু বেশিই ঝালপ্রেমী হয়ে থাকে। ওনেকেই আবার খাবার পাতে আলাদা করে ঝাল আচার বা কাঁচা মরিচ খেতেও বেশ ভালোবাসেন।

কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিদগন এক সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন। অতিরিক্ত ঝাল খাওয়ার কারণে মানুষের মধ্যে অ্যালঝাইমার্স রোগের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। তাই যারা ঝাল খেতে ভালোবাসেন, তারা এটি জানার পর অন্তত এখন থেকে একটু ঝাল খাওয়া কমিয়ে আনুন ।

অনেকেই মনে করেন, মরিচে থাকা ক্যাপসাইসিন আমাদের বুদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত ক্যাপসাইসিন নার্ভের ব্যথা দূর করতে সক্ষম আর সেই কারণেই যারা বেশি ঝাল খান তাদের স্মৃতিশক্তি হয়তো ধীরে ধীরে লোপ পায়। অবশ্য হট সস খেলে সৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা বললেই চলে ।

কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে , অতিরিক্ত ঝাল খাবার বা মাত্রাতিরিক্ত মরিচ খাওয়ার অভ্যেস স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দিতে পারে। চার থেকে পাঁচ হাজার মানুষকে নিয়ে একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে, প্রতিদিন যারা ৫০ গ্রাম মরিচ খান, তাদের স্মৃতিশক্তি হারানোর পরিমাণ দ্বিগুণ বেড়ে যায় ।

অন্য আরেকটি গবেষণায় উঠে এসেছে আরও চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য। যে সকল ঝাল প্রেমিরা ১৫ বছর ধরে একটানা বেশি ঝাল খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে, তাদের ৫৬ শতাংশরই স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যায়।


তথ্যসূত্র - প্রথম আলো  -  বাংলাদেশ প্রতিদিন  - জাগো নিউজ  -  মানব জমিন  

চিত্রসূত্র - Photo by Artem Beliaikin from Pexels

Post a Comment

0 Comments

Ads 4