Auto Ads 1

তুলসী পাতার উপকারিতা ও তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম




তুলসী একটি ঔষধিগাছ। তুলসী অর্থ যার তুলনা নেই। তুলসী গাছ লামিয়াসি পরিবারের অন্তর্গত একটি সুগন্ধী উদ্ভিদ। হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে এটি একটি পবিত্র উদ্ভিদ হিসাবে সমাদৃত। ব্রহ্মকৈবর্তপুরাণে তুলসীকে 'সীতাস্বরূপা', স্কন্দপুরাণে 'লক্ষীস্বরূপা', চর্কসংহিতায় 'বিষ্ণুপ্রিয়া', ঋকবেদে 'কল্যাণী' বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

তুলসীর ইংরেজি নাম: holy basil, বা tulasī) (তুলসীর বৈজ্ঞানিক নাম: Ocimum Sanctum) একটি ঔষধিগাছ।

হিন্দু ধর্মে বলা হয়, কৃষ্ণ এবং তার ভক্তদের সেবা করার জন্য বৃন্দাবনের একজন অভিভাবক হিসাবে দেবী বিরিন্দাই তুলসী পাতা হিসাবে জন্ম নেন। আবার প্রাচীন গ্রন্থে বলা হয়, কৃষ্ণ নিজেই তাকে তুলসী আকারে গ্রহণ করেছেন।

তুলসীর জন্ম যেখানেই হোক না কেন, সেটিকে পবিত্র বলে বিবেচিত বৃন্দাবনের মাটি বলেই মনে করা হয়, যেখানে এই তুলসী গাছ প্রচুর পরিমাণে জন্মে থাকে।

সারা পৃথিবী জুড়ে লক্ষ লক্ষ হিন্দু ধর্মাবলম্বিরা তাদের দৈনন্দিনের ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে, মন্দিরে বা বাড়িতে, তুলসী গাছের পাতা ব্যবহার করে থাকে।

তুলসী গাছটি ঘন শাখা প্রশাখা বিশিষ্ট ২/৩ ফুট উঁচু একটি চিরহরিৎ গুল্ম। তুলসী গাছের মূল কাণ্ড কাষ্ঠল ও পাতা ২-৪ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। পাতার কিনারা খাঁজকাটা, শাখাপ্রশাখার অগ্রভাগ হতে ৫টি পুষ্পদণ্ড বের হয় ও প্রতিটি পুষ্পদণ্ডের চারদিকে ছাতার আকৃতির মত ১০-২০ টি স্তরে ফুল থাকে। প্রতিটি স্তরে ৬টি করে ছোট ফুল ফোটে। এর পাতা, ফুল ও ফলের একটি ঝাঁঝালো গন্ধ আছে। পরিবেশে তুলসী গাছ প্রচুর পরিমানে অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে , যেকারনে এই তুলসী গাছকে 'অক্সিজেনের ভাণ্ডার' বলা হয়।

তুলসী গাছের প্রাপ্তিস্থানঃ

বাংলাদেশ ও ভারতের প্রায় সর্বত্র দেখা যায়। হিন্দুবাড়িতে বেশি দেখা যায়, পূজায় ব্যবহার হয়। ভারতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। জুলাই, আগস্ট বা নভেম্বর, ডিসেম্বর মাসে এতে মঞ্জরী দেখা দেয়। সমতলভূমি থেকে শুরু করে হিমালয়ের অভ্যন্তরে প্রায় ৬০০০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত তুলসী গাছ জন্মাতে দেখা যায়।

তুলসী পাতার ব্যবহারঃ

তুলসী গাছের নানা ঔষধি ব্যবহার রয়েছে। সর্দি, কাশি, ঠাণ্ডা লাগা ইত্যাদি নানা সমস্যায় তুলসী ব্যবহার করা হয়। এ গাছের রস কৃমি ও বায়ুনাশক। ঔষধ হিসাবে এই গাছের ব্যবহার্য অংশ হলো এর রস, পাতা এবং বীজ। বাংলাদেশে যে চার প্রকার তুলসী গাছ দেখা যায় ।

৪ প্রকার তুলশির নাম:

  • কৃষ্ণ-তুলসী,
  • শ্বেত তুলসী ,
  • বাবুই তুলসী ও
  • রামতুলসী।
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে তুলসী গাছের ২/১ টা কাঁচা পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন। কিংবা ৫/৬ টা তুলসী পাতা আগের রাতে এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন সকালে পানিটি ভাল করে ছেঁকে খেয়ে নিন।

তুলসী পাতার চাঃ

তুলসী পাতা দিয়ে চা বানিয়ে খেলে শরিরের অনেক উপকার হয়।

তুলসী পাতা স্ট্রেস কমায়ঃ

শরীরে অ্যান্টি-স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে তুলসি পাতা দারুন কাজে দেয়। ফলে স্ট্রেস লেভেল কমতে শুরু করে। আসলে তুলসি পাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি স্ট্রেস এজেন্ট রয়েছে, যা রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয়। ফলে শরীরে উপস্থিত নানা ক্ষতিকর উপাদানের শক্তি কমতে থাকে, সেই সঙ্গে কমতে শুরু করে স্ট্রেসও।

কিডনির পাথর সারাতে তুলসী পাতাঃ

তুলসি পতায় রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে সেখানে পাথর হওয়ার আশঙ্কা কমায়। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন যদি মধু দিয়ে তৈরি চুলসি পাতার রস খাওয়া যায়, তাহলে কিডনির পাথর গলে তো যায়ই, সেই সঙ্গে শরীর থেকে তা বেরিয়েও যায়। প্রসঙ্গত, তুলসি পাতায় যে ডিটক্সিফাইং এজেন্ট রয়েছে তা শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়তে দেয় না। ফেল কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়।

তুলসী পাতা হার্ট ভালো রাখেঃ

তুলসী পাতায় আছে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই উপাদানগুলো হার্টকে বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্ত রাখে সহায়তা করে। তুলসী পাতা হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়ায় ও এর স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

তুলসী পাতায় ক্যানসার রোগকে হারিয়ে দেওয়ার ক্ষমতাও রয়েছেঃ

প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-কার্সিনোজেনিক প্রপাটিজ এবং অ্যান্টি-অ্যাক্সিডেন্ট থাকায় তুলসি পাতা খেলে ক্যানসার রোগও দূরে পালায়। একাধিক গবেষণা অনুসারে, রোজ যদি তুলসি পাতা চিবিয়ে খাওয়া যায়, তাহলে ব্রেস্ট এবং ওরাল ক্যানসার কমতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস করে তুলসি পাতার রস খেলে পরিবেশে উপস্থিত নানা ক্ষতিকর উপাদান আমাদের শরীরকে নষ্ট করতে পারে না। ফলে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে।

তুলসী পাতা নানা রকমের স্টমাক সম্পর্কিত রোগ কমায়ঃ

গত কয়েক বছরে আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বে গ্যাস্ট্রিক প্রবলেম, আলসার, ব্লটিং প্রভৃতি রোগের প্রকোপ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। আর তুলসি পাতা এইসব রোগ সারাতে দারুণ কাজে আসে। প্রতিদিন সকালে এক চামচ তুলসির জুসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে নানা রকমের পেটের রোগ একেবারে দূরে পালায়।

তুলসী পাতা রোগ নিরাময় ক্ষমতাঃ

তুলসী গাছের ঔষধি-গুণাবলি সমৃদ্ধ গাছ। তুলসীকে নার্ভের টনিক বলা হয় এবং এটা স্মরণশক্তি বাড়ানোর জন্য বেশ উপকারী। এটি শ্বাসনালী থেকে শ্লেষ্মাঘটিত সমস্যা দূর করে। তুলসী পাতা পাকস্থলীর ও কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

তুলসী পাতা ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সুগারের সবথেকে বড় যম। আর এই উপাদানটি বিপুল পরিমাণে রয়েছে তুলসি পাতায়। তাই তো প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কয়েকটি তুলসি পাতা যদি চেবানো যায়, তাহলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত কমতে শুরু করে। তবে এক সঙ্গে অনেক চুলসি পাতা খেয়ে নিলে কিন্তু হঠাৎ করে শর্করারা মাত্রা কমে গিয়ে অন্য় বিপদ হতে পারে। তাই অল্প করে তুলসি পাতা খাওয়া উচিত।

তুলসী পাতা মুখের দুর্গন্ধ দূর করেঃ

সকাল সকাল কয়েকটি তুলসি পাতা চিবিয়ে খেলে মুখের ভেতর জন্ম নেওয়া নানান ক্ষতিকর ব্য়াকটেরিয়া মারা যায়। ফলে মুখ থেকে আর বাজে গন্ধ বেরয় না। প্রসঙ্গত, আমাদের দাঁতকে নানান ধরনের জীবাণুর হাত থেকে বাঁচাতেও তুলসি পাতার গুনের জুড়ি নেই।

তুলসী পাতা জ্বর ও ঠাণ্ডা লাগা কমায়ঃ

সেই ছোট বেলা থেকে শুনে আসা কথাটা বাস্তবিকই ঠিক যে জ্বর এবং ঠান্ডা লাগা কমাতে তুলসির কোনও বিকল্প নেই। আসলে তুলসি পাতা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও জোরাল করে দেয়। ফলে রোগ-ভোগ কমতে শুরু করে। শুধু তাই নয় এতে উপস্থিত অ্যান্টি-ব্য়াকটেরিয়াল প্রপাটি নানা ধরনের সংক্রমণ থেকেও আমাদের দূরে রাখে।

তুলসী পাতা ত্বকের সমস্যাঃ

তুলসী পাতার রস ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। তুলসী পাতা বেঁটে সারা মুখে লাগিয়ে রাখলে ত্বক সুন্দর ও মসৃণ হয়। এ ছাড়াও তিল তেলের মধ্যে তুলসী পাতা ফেলে হালকা গরম করে ত্বকে লাগালে ত্বকের যে কোনও সমস্যায় বেশ উপকার পাওয়া যায়। এ ছাড়াও ত্বকের কোনও অংশ পুড়ে গেলে তুলসীর রস এবং নারকেলের তেল মিশিয়ে লাগালে জ্বালা কমবে এবং সেখানে কোনও দাগ থাকবে না।

তুলসী পাতা চোখের নানা রোগ সারায়ঃ

নানা ধরনের ছোট-বড় চোখের রোগ সারাতে তুলসি পাতার কোনও বিকল্প নেই। প্রসঙ্গত, ভিটামিন- এ-র ঘাটতির কারণে যে যে চোখের রোগ হয়, সেগুলির প্রকোপ কমাতে দারুন কাজে আসে তুলসি পাতা।চোখের সমস্যা দূর করতে রাতে কয়েকটি তুলসী পাতা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। ওই পানি দিয়ে সকালবেলা চোখ ধুয়ে ফেলুন।

তুলসী পাতা মাথা যন্ত্রণা কমায়ঃ

একটা বড় পাত্রে জল নিয়ে তাতে কয়েকটা তুলসি পাতা ফেলে দিন। তরপর সেই জলটা ফুটিয়ে নিন। এবার মাথা টাওয়ালে ঢেকে সেই জলের ভাব নিলে দেখবেন মাথা যন্ত্রণা কমে যাবে। আসলে তুলসী পাতায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে য নিমেষে মাথা যন্ত্রণা কমিয়ে ফেলতে কার্যকরি ভূমিকা নেয়।


নিজের প্রয়োজনে , বাসার বারান্দায় অথবা বাড়ির আঙ্গিনায় বা ফুলের টবে অন্তত একটি করে হলেও তুলসী গাছ লাগান । পোষ্টটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন আপনার ভালবাসার প্রিয় মানুষের কাছে । তারাও যেনো পড়ে জানতে পারে তুলসীর উপকার ও তুলসির গুনাগুন সম্পর্কে ।

দোয়া করি - সুস্থ থাকুন , ভালো থাকুন । আর মন-মানসিকতা ভাল করুন ।

Post a Comment

0 Comments

Ads 4