Auto Ads 1

ড্রাগন ফলের পুষ্টি উপাদান ও ওষুধি গুনাগুন




রূপকথা বা কল্পকাহিনির সিনেমায় ড্রাগন দেখা যায় । আজ যে ড্রাগনের কথা বলছি এটা কিন্তু সেই ড্রাগন নয়, এটা জলজ্যান্ত একটি পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি ফল। যার নাম- ড্রাগন ।এই ফলটি খুবই সুস্বাদু ও লোভনীয় । ড্রাগন ফলটি বিদেশি ফল হলেও সুমিষ্ট স্বাদ ও পুষ্টিগুণের জন্য বাংলাদেশেই চাষ শুরু হয়েছে।ড্রাগন ফল জুলাই মাসের শেষ দিকে বাজারে আসতে শুরু করে। এখনো বাজারে পাবেন পুষ্টিগুনে ভরা এই ড্রাগন ফল।


ড্রাগন ফলের বিভিন্ন নাম গুলি কি কি ?

চীন দেশের মানুষেরা এটিকে ফায়ার ড্রাগন ফল এবং ড্রাগন পার্ল ফল বলে থাকে, ভিয়েতনামে সুইট ড্রাগন, থাইল্যান্ডে ড্রাগন ক্রিস্টাল, , মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া ড্রাগন ফল নামে পরিচিত। অন্যান্য অনেক দেশের এই ফলটির দেশীয় নাম হলো স্ট্রবেরি নাশপাতি.

ড্রাগন ফলের ইংরেজি নাম কি ?

ড্রাগন ফলের ইংরেজী নাম – Pitaya ( পিটায়া )

ড্রাগন ফলের বৈজ্ঞানিক নাম কি ?

ড্রাগন ফলের বৈজ্ঞানিক নাম হলো – Hylocereus undatus ( হাইলোসিয়াস আন্ডাটাস )


এই ফলের নাম ড্রাগন কেন ?

ড্রাগন ফল দেখতে আকর্ষণীয় এবং খুবই সুন্দর। পাতাবিহীন ড্রাগন ফলটি দেখতে ডিম্বাকার এবং উজ্জ্বল গোলাপি বা লাল রঙের। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এই ফলের বাইরের খোসা দেখতে রূপকথার কল্পকাহীনির ড্রাগনের পিঠের মতো। এই রূপকথার কল্পকাহীনির সেই সিনেমার ড্রাগনের মতো কিছুটা দেখতে হওয়াই এই ফলটির নাম ড্রাগন ফল হয়েছে.

ড্রাগন ফলটি খুবই সুস্বাদু ,এটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল। এটি অসাধারণ স্বাদযুক্ত এবং শরিরের প্রয়োজনীয় চাহিদা চাহিদা মেটায়। পুষ্টিগুনে ভরপুর, প্রিবায়োটিক ফাইবার ( Probiotic fiber ) এবং উপকারী উদ্ভিদ কমপ্লেক্স সমৃদ্ধ। আপনি যদি আপনার ফ্রুট ( Fruit ) ডায়েটের ক্ষেত্রে কিছু ভিন্ন পুষ্টিগুন যুক্ত করতে চান, তবে ড্রাগন ফলটি যুক্ত করতে পারেন । ড্রাগন ফলটি নানা পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং খুবই সুস্বাদু একটি ফল ।


ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুনঃ


ড্রাগন ফলটি কম ক্যালোরি যুক্ত হলেও প্রয়োজনীয় ভিটামিন ( Vitamin ) এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে ভরপুর । ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে ডায়েট্রি ফাইবার ( Dietary Fiber ) রয়েছে।

প্রতি ২৫০ গ্রাম ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টিগুণ রয়েছে যা শরিরের জন্য খুবই উপকারি ।


ড্রাগন ফলে রয়েছেঃ
  • প্রোটিন: ৩ গ্রাম
  • ফাইবার: ৭ গ্রাম
  • ফ্যাট: ০ গ্রাম
  • ক্যালোরি: ১৩৯
  • ভিটামিন ই: দৈনিক চাহিদার ৪%
  • ম্যাগনেসিয়াম: দৈনিক চাহিদার ১৯%
  • ভিটামিন সি: দৈনিক চাহিদার ৯%
  • কার্বোহাইড্রেট: ৩০ গ্রাম
  • আয়রন: দৈনিক চাহিদার ৮%

প্রতি ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলের লাল বা সাদা অংশে রয়েছে ২১ মি.গ্রা. ভিটামিন সি ,যা দৈনিক ৩৪ শতাংশ ভিটামিন সি’র চাহিদার পূরণ করতে সাহায্য করে থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলে যে পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে তা একটি কমলা লেবুর সমান বা তিনটি গাজরের সমান বা তার বেশিই ভিটামিন সি থাকে প্রতি ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলে।

প্রতি ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলে ৩ গ্রাম আঁশ থাকে যা দৈনিক চাহিদার ১২ শতাংশ। ড্রাগন ফলের আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য সারাতে খুবই কার্যকরি। প্রতি ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলে জলীয় শতাংশ আছে ৮৭ গ্রাম, প্রোটিন থাকে ১.১ গ্রাম, ফ্যাট আছে ০.৪ গ্রাম ( ফ্যাট নাই বললেই চলে ) এবং কার্বোহাইড্রেট আছে ১১.০ গ্রাম।

প্রতি ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলে আছে ০.০৪ মি.গ্রা. ভিটামিন বি আছে ১, ০.০৫ মি.গ্রা. ভিটামিন বি আছে ২, ০.০১৬ মি.গ্রা ভিটামিন বি ৩ এবং ২০.০৫ মি.গ্রা. ভিটামিন সি আছে ।আয়রনের ভালো উৎস এই ফলটি। ১.৯ মি.গ্রা. আয়রন থাকে প্রতি ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলে । এছাড়াও ড্রাগন ফলে আছে ক্যালসিয়াম ৮.৫ মি.গ্রা. এবং ফসফরাস আছে ২২.৫ মি.গ্রা.।

ড্রাগন ফল রেড পিটায়া ( Red Pitaya ), স্ট্রবেরি পিয়ার ( Strawberry Pear ), কনডেরেলা প্ল্যান্ট ( Condella plant ) আরও কিছু নামেও পরিচিত।


ড্রাগন গাছের গঠনপ্রনালীঃ


ড্রাগন ফলের গাছ লতানো, মাংসল, খাঁজকাটা। লোহা, কাঠ বা সিমেন্টের খুঁটি বেয়ে বেড়ে ওঠে । ড্রাগন পাকা ফল না ধুয়ে পাঁচ দিন পর্যন্ত ফ্রিজে রাখলেও ভালো থাকে এই ফলটি।ড্রাগন ফলটি সাধারনত চার ধরনের দেখা যায়— লাল বাকল, সাদা শাঁস; লাল বাকল, লাল শাঁস; হলুদ বাকল, সাদা শাঁস; লাল বাকল ও নীলচে লাল শাঁস। ড্রাগন ফলের রঙের ভিন্নতার প্রকার অনুযায়ী স্বাদের ক্ষেত্রেও কিছুটা ভিন্নতা লক্ষ করা যায়। শাঁসের ভেতর রয়েছে ছোট ছোট কালো বীজ ।

চিরসবুজ ক্যাকটাস ড্রাগন ফলের গাছটির গঠন । ফুল হয় লম্বাটে ও সাদা এবং অনেকটা নাইট কুইনের মতো দেখতে ড্রাগন। অনেক ভেষজ ও ঔষধি গুণ রয়েছে এই ড্রাগন ফলে ।

জেনে নিন ড্রাগন ফলের কয়েকটি পুষ্টি গুণের কথা:

ড্রাগন ফলে কোলস্টেরল কমায়ঃ
ড্রাগন ফলটি কোলস্টেরল কমিয়ে হৃদ্‌যন্ত্র ভালো রাখতে খুবই কার্য্যকরী ভূমিকা রাখে। যাঁরা একটু বেশিই স্বাস্থবান তারা যদি ওজন কমাতে চান, তাঁদের জন্য ড্রাগন ফলটি খুবই ভালো একটিও উপায় ( শরিরের ওজন কমানোর ক্ষেত্র )। ড্রাগন ফলের বীজে আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা শরিরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।এই ফলের খোসা হয় খুবই পাতলা। ড্রাগন ফলে আছে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’, খনিজ লবণ ও আঁশ । বহুমূত্র, রক্তচাপ ও শরীরের স্থূলতা কমাতে সাহায্য করে ড্রাগন ফলটি। লাল রঙের ড্রাগন ফলটি থেকে চমৎকার এক প্রাকৃতিক রং পাওয়া যায় যা দেখতে রক্তের মতো। ড্রাগন ফলের এই রং শরবত তৈরিতেও ব্যবহার করা হয় ।

আরও জানুন -

মধু খাওয়ার নিয়ম এবং মধুর অসাধারণ গুনাগুন

তুলসী পাতার উপকারিতা ও তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম

লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও লেবুর পুষ্টিগুন

গরম পানি খাওয়ার নিয়ম ও গরম পানির উপকারিতা

লাল চা খাওয়ার নিয়ম ও লাল চায়ের উপকারীতা

বৃষ্টির পানির উপকার ও ব্যবহারের নিয়ম

দাতের ব্যথায় করনীয় এবং ঘরোয়া টোটকামাইগ্রেন কি কেনো হয় এবং হলে করনীয় কি

ফাইবার ( Fiber )

ড্রাগন ফলে আছে প্রচুর ফাইবার । যুক্তরাজ্যের লিডস ( Leeds, UK ) বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষকগন গবেষণা করে পেয়েছেন, ফাইবারযুক্ত খাবার বেশি খেলে কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ ( Cardiovascular disease ) বা করোনারি হার্ট ডিজিজের ( Coronary heart disease ) ঝুঁকি কমে। এই ড্রাগন ফলটি ডায়েটারি ফাইবারের ভালো উৎস হিসেবে কাজ করে।

ডায়েটারি ফাইবার ( Dietary Fiber ) হলো হজমযোগ্য কার্বোহাইড্রেট ( Non-digestible Carbohydrates ) যার রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে স্বাস্থ্য উপকারিতা । স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরামর্শ দিয়েছেন পুরুষদের ৩৮ গ্রাম এবং মহিলাদের প্রতিদিন ২৫ গ্রাম ফাইবার খাওয়া উচিৎ যা শরিরের জন্য খুবই উপকার। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ( Antioxidant ) এর মতোই, ফাইবার ( Fiber ) সমৃদ্ধ খাবার ফাইবার পরিপূরক সমূহের থেকে বেশী উপকারী.

যদিও ফাইবার ( Fiber ) খাবার হজমে কার্য্যকরী ভূমিকা রাখার জন্য বেশিই পরিচিত, কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে যে, এটি হৃদরোগ, টাইপ 2 ডায়াবেটিস ( Type 2 Diabetes ) এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে কার্য্যকরী ভূমিকা রাখে। যদিও গবেষক রা বলেছেন এই বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন, আবার কিছু গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, উচ্চ ফাইবার ( High Fiber ) সমৃদ্ধ খাবার কোলন ক্যান্সার ( Colon Cancer ) এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে খুবই সহায়ক ভূমিকা পালন করে .

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ( Antioxidant )


ড্রাগন ফলে আছে প্রচুর ফাইটোনিয়ট্রিয়েন্ট ( Phytonutrients ) , যা শরীরে অতিপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জোগাতে সাহায্য করে। শরীরে ক্ষতিকর ফ্রি র‍্যাডিকেলসের ( free radicals )বিরুদ্ধে লড়তে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ড্রাগন ফলটি ত্বকের ক্ষতি ও ক্যানসার প্রতিরোধ করতে অনেক সহায়ক ।

পটাশিয়াম ( Potassium )


ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমান প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান। ক্যালসিয়ামের ও পটাশিয়াম হাড়ের জন্য খুবই দরকারি একটি উৎস যা শরীরের স্নায়ুতন্ত্র ঠিক রাখতেও কার্য্যকরী ভূমিকা পালন করে। জাপানের সিগা ইউনিভার্সিটি অব মেডিকেল সায়েন্স (Siga University of Medical Sciences ) এর গবেষকগনের গবেষণায় পাওয়া যায় ডায়াবেটিস রোগীদের পটাশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার হার্ট ও কিডনি ভালো রাখতে সাহায্য করে।

ভিটামিন সি ( Vitamin C )


ভিটামিন সি এর দারুণ উৎস এই ড্রাগন ফল । ড্রাগন ফল খেলে শরিরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, আয়রনের ভালো উৎস এই ড্রাগন ফলটি । এই ড্রাগন ফল দাঁত মজবুত করে এবং ত্বক সতেজ রাখতে সাহায্য করে। প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে ড্রাগন ফলে। ভিটামিন ও খনিজ লবণযুক্ত এই ফলটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়াও ড্রাগন ফল খেলে যাদের অ্যাজমার সমস্যা আছে তাদের জন্য এই ফলটি ভালো উপকার পাওয়া যায়। ড্রাগন ফল অ্যাজমা-ঠান্ডা-কাশি প্রতিরোধ করে এবং ত্বক সুন্দর রাখতে সাহায্য করে ও মানসিক অবসাদ দূর করে ড্রাগন ফল।
সারা বিশ্বে ড্রাগন ( World Dragon )

এই মহাজাতিয় হায়লোসিরিয়াস এর দ্রাক্ষালতা মত ড্রাগন বা পিটায়া ( Pitaya ) প্রথম প্রথম আসতো স্থানীয় মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও মেক্সিকো থেকে।

ড্রাগন ফলটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং পূর্ব এশিয়া দেশগুলোতে এখন পাওয়া যায়ঃ

ইন্দোনেশিয়া'র তথ্যের হিসাবে (বিশেষ করে পশ্চিমা জাভা ” র),

ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, তাইওয়ান, শ্রীলঙ্কা,

আরও পাওয়া যায় - উত্তর অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ গণচীন, ওকিনাওয়া, হাওয়াই, ইসরায়েল, ও প্যালেস্টাইনে পাওয়া যায়।

সাম্প্রতিককালে সুস্বাদু ও পুষ্টিগুনে ভরা এই ড্রাগন ফল বাংলাদেশেও চাষ হচ্ছে প্রচুর পরিমানে।

চিত্রসূত্র-  Photo by Any Lane from Pexels

Post a Comment

0 Comments

Ads 4